৫ ভাগ মানুষের দখলে ঢাকার ৭০ ভাগ রাস্তা

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে দুই বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকন। এ ছাড়া একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে গণপরিবহনকে প্রাধান্য না দিয়ে রাজধানীর পরিবহন পরিকল্পনায় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন মেয়র।

রাজধানীর সড়কের দিকে তাকালে চোখ পড়ে ব্যক্তিগত গাড়ির (প্রাইভেটকার) দাপট। হিসাব বলছে, ঢাকা শহরের মোট যাত্রীর পাঁচ থেকে ছয় ভাগ পরিবহন হয় ব্যক্তিগত গাড়িতে; কিন্তু তা সড়কের ৭০ ভাগ অংশ দখল করে রাখে।

অন্যদিকে ২৮ ভাগ যাত্রী চলাচল করে গণপরিবহন অর্থ্যাৎ বাসে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, একটি বাস যে পরিমাণ যাত্রী বহন করতে পারে; তার জন্য কমপক্ষে ৫০টি ব্যক্তিগত গাড়ির প্রয়োজন। কিন্তু একটি বাস সড়কে যে জায়গা নেয় তা দুটি ব্যক্তিগত গাড়ির চেয়েও কম।

যানজট, জ্বালানি খরচ, পরিবেশ দূষণের কারণে নিরুৎসাহিত করা হয় ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও শনিবার পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস’। তবে বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, ঢাকার পরিস্থিতি গণপরিবহনের চেয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে সহায়ক। যা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মারুফ হোসেন বলেন, ‘(আপনি) হোম লোন পাবেন না, আপনি ব্যবসার জন্য টাকা পাবেন না, কিন্তু গাড়ি কেনার জন্য আপনি জিরো সার্ভিস চার্জ দিয়ে একদিনের মধ্যে একটা লোন করিয়ে নিতে পারবেন।’

‘ঢাকা শহরে সেভেনটি সিক্স পার্সেন্ট ট্রিপ হচ্ছে আপনার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে, তারও অর্ধেক হচ্ছে দুই কিলোমিটারের মধ্যে। এটা যদি হাঁটার জন্য ভালো পথ করেন, মানুষ হেঁটে ২৪ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারে, যেটা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব না। আর বাকি পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বাইসাইকেল ইন্ট্রোডিউস করেন, তাহলে কিন্তু স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, দূষণ কমবে, জ্বালানি লাগবে না।’

‘প্রায় সেভেনটি থেকে এইটি পার্সেন্ট (সমস্যা) চলে গেল। বাকি যেটা থাকে সেইটা যদি আপনি গণপরিবহনকে প্রায়োরিটি দেন, যে গণপরিবহনকে ঢেলে সাজাবেন, তাহলে কিন্তু একটা সুন্দর সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেন’, যোগ করেন মারুফ হোসেন। ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলার বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন জানান, সব পক্ষের সমন্বয় ও অংশগ্রহণ এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

মেয়র বলেন, ‘এই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের জন্যে এই ঢাকা শহরের যানজট কিন্তু কঠিন একটা অবস্থা। আমরা তাদের জন্য ফ্লাইওভার বানিয়ে দিচ্ছি, আমরা তাদের জন্য এটা করছি, ওটা করছি, (কিন্তু তারা) অনলি সিক্স টু সেভেন পারসেন্ট। অবশ্যই আমাদের প্রায়োরিটিটা দিতে হবে আমাদের মেজোরিটি পিপলের জন্য, যেখানে বেশির ভাগ হেঁটে এবং বাসে চলাচল করে। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবার জন্য ইনশা আল্লাহ আমরা আশা করি আগামী দুই বছর সময় লাগবে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয়।’ বিশেষজ্ঞরা জানান, সুশৃঙ্খল ও মানসম্মত গণপরবিহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বহুমাধ্যমভিত্তিক পরিবহন পরিকল্পনা করলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার এমনিতেই কমে আসবে।