ছাত্রলীগের টানা সংঘর্ষ: পুলিশের নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম কলেজ

ঘোষিত কমিটি নিয়ে চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের বিবাদমান গ্রুপের মধ্যে টানা সংঘর্ষ চলছে। এরমধ্যে ৫ দিনের মাথায় রোববার সকাল থেকে কলেজ ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। ফলে কোনোরকম সংঘর্ষের ঘটনা আজ ঘটেনি। তবে ছাত্রলীগের দুপক্ষ ঠিকই মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। যাদের হাতে ছিল না গত চারদিনের মতো কোনোরকম আগ্নেয়াস্ত্র। কারণ কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেখার পাশাপাশি শরীরেও তল্লাশি চালায়। এ জন্য চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাস ঘিরে ৩ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা।

তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম কলেজে তান্ডব চালিয়েছে ছাত্রলীগ। তবে এদের মধ্যে বহিরাগত ছিল বেশি। যাদের হাতে বন্দুকসহ নানা রকম আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। কলেজ ক্যাম্পাসে এরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সড়ক অবরোধ করে জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসকে দুর্বিসহ করে তোলেছে।

টানা সংঘাত-সংঘর্ষের কারণে আজ রোববার সকাল থেকে কলেজ ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। যারা কলেজ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করেছে। পরিচয়পত্র প্রদর্শন ছাড়া কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় এবং শরীর তল্লাশি করে প্রবেশ করার ফলে কলেজে আজ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
তবে আজও ছাত্রলীগের দুইপক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। পদবঞ্চিতরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। তারা মিছিল করার প্রস্তুতিও নিয়েছিল। অন্যদিকে নবগঠিত কমিটির নেতাকর্মীরাও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিল। কিন্তু পুলিশ কাউকে মিছিল করতে দেয়নি।
এর আগে গত শনিবার সকালেও দুপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগ। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনা যায়। একটি পক্ষ সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার, বুধবার ও মঙ্গলবার ৩দিনই সড়ক অবরোধ করেছিল ছাত্রলীগ। ফলে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।
এছাড়া মঙ্গলবার ও বুধবার দু’দিন সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগ। এ সময় বন্দুক উচিয়ে গুলি করতেও দেখা যায় কয়েকজনকে। এদের মধ্যে সাব্বির সাদিক নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফততার করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে গুলিসহ বন্দুকটিও উদ্ধার করা হয়েছে। একই সাথে ধারালো অস্ত্র ও মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় চট্টগ্রাম কলেজ ও আশপাশের এলাকা। এতে চরম ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ। এতে মাহমুদুল করিমকে সভাপতি ও সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি অনুমোদন দেয় নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হাসান ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দস্তগীর চৌধুরী। মাহমুদুল করিম প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং সবুজ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী। আর এই কমিটি প্রত্যাখান করে মঙ্গলবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া মেয়রের ছয়জন অনুসারী কমিটি থেকে পদত্যাগও করেন।