শুক্রবার পাগলা কানাই এর ২০৮ তম জন্ম বার্ষিকী

কোরবান আলী, ঝিনাইদহ : জিন্দাদেহে মুরদা বসন থাকতে কেন পরনা, মন তুমি মরার ভাব জাননা, ওরে মরার আগে না মরিলে পরে কিছুই হবে না।
—এমনি শতশত গানের রচয়িতা মরমী কবি পাগলাকানাই। এই কবির ২০৮ তম জন্মদিন শুক্রবার। মরমী সঙ্গীতের এ কবি ঝিনাইদহের বেড়বাড়ি গ্রামে বাংলা ১২১৬ সালের ২৫ ফাল্গুন জন্ম গ্রহণ ও বাংলা ১২৯৬ সালের ২৮ আষাঢ় মৃত্যুবরণ করেন।

এ উপলক্ষ্যে কবির জন্মভিটা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামে পাগলা কানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ ৩ দিনব্যাপি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

অনুষ্ঠান মালার প্রথম দিনে রয়েছে কবির সমাধিতে পুস্পমাল্য অর্পন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, লাঠিখেলা, পাগলা কানাই রচিত গানের প্রতিযোগিতা। অনুষ্ঠান মালার দ্বিতীয় দিনে রয়েছে চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ্অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, ধুয়াজারী গানের প্রতিযোগিতা। উৎসবের শেষ দিন ১১ই মার্চ মুল পর্ব আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এসব অনুষ্ঠানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসছেন কবি ভক্তরা। এদিকে মরমী কবি পাগলাকানাই রচিত অসংখ্য গান দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে আজ তা হারিয়ে যাচ্ছে। কবির মাজারসহ অযতেœ অবহেলায় রয়েছে একটি লাইব্রেরী।

জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই পাগলাকানাই অত্যন্ত দূরন্ত প্রকৃতির তবে আধ্যাত্মিক স্বভাবের ছিলেন। বাল্যকালে পিতৃহারা পাগলা কানাই-এর অর্থের অভাবে পড়ালেখা হয়নি। তিনি মানুষের বাড়ি রাখালের কাজ করেছেন। গরু চরাতে গিয়ে ধুয়ো জারি গান গাইতেন। নিরক্ষর হলেও তার স্মৃতি ও মেধা ছিল প্রখর। তিনি উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে গান রচনা করে নিজ কন্ঠে পরিবেশন করতেন। তার সঙ্গীতে যেমন ইসলাম ধর্মের তত্বকে প্রচার করেছেন তেমনি হিন্দু-পুরাণ রামায়ণ ও মহাভারত থেকেও নানা উপমার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। এ কারণেই তার গান সর্বজনীনতা লাভ করে। তার মধ্যে বাউল ও কবিয়াল এ দুয়ের যথার্থ মিলন ঘটেছে। পাগলাকানাই-এর গান গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পাগলা কানাই এর অবদান আমাদের সাহিত্যকে ঐতিহ্য মন্ডিত করেছে। তার রচিত ৩ সহস্রাধিক গান থাকলেও আজও তা সংগৃহিত হয়নি। ঝিনাইদহসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলোতে মানুষের মুখে মুখে ঘুরে ফেরে তার গান।

পাগলাকানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আব্দুর রশিদ জানান, দুই লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে কবির সমাধিস্থল তৈরী ছাড়াও একটি লাইব্রেরী স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি পাগলাকানাইয়ের একটি কল্পিত প্রতিকৃতিও অঙ্কন করা হয়েছে। কবির সৃষ্ট গানগুলো সংরক্ষণ, গবেষণা ও মাজার প্রাঙ্গণে একটি কমপ্লেক্স তৈরীসহ রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানান তিনি। লালন পরবর্তী কালের অন্যতম মরমী সাধক ও লোক কবি পাগলা কানাই রচিত গান সংরক্ষণ করে তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার দাবী ঝিনাইদহ বাসীর।

সব খবর/ ঝিনাইদহ/ ৮ মার্চ ২০১৮/ লিটন