কোরবান আলী, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে নুরজাহান বেগম নামের এক বিধবা মা তার সৎ ছেলেদের অত্যাচার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে সংবাদিক সম্মেলন করেছেন। তার ছেলেকে হত্যার হুমকি, বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া, ধরন্ত শিমগাছ কেটে ফেলা, মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সোমবার কালীগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবে এ সংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে নুরজাহান বেগমের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার ছেলে মাহফুজ হোসেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে নুরজাহান বেগম অভিযোগ করে বলেন, ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত নুরুল হক ব্যাপারীর ছেলে আব্দুল মান্নানের সাথে তার বিয়ে হয়। ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর স্বামী আব্দুল মান্নান মারা যান। নুরজাহান বেগমের সাথে বিয়ের আগে আব্দুল মান্নানের আরো একটি বিয়ে ছিল। সেই ঘরে কামাল, জসীম, ইসরাফিল, সুফিয়া ও মনোয়ারা নামের ৫ ছেলে-মেয়ে রয়েছে। স্বামী বেঁচে থাকা অবস্থায় বড় ছেলে কামালকে ১ বিঘা, মেঝ ছেলে জসীমকে ১ বিঘা জমি, ছোট ছেলে ইসরাফিলকে নগদ ৮০ হাজার টাকা ও ১০ কাঠা জমি এবং তার ছেলে মাহফুজ নাবালক থাকায় তাকে দেড় বিঘা জমি লিখে দিয়ে যান। এছাড়া আমার স্বামীর প্রথম স্ত্রী কে ২ বিঘা ও আমাকে ২৭ শতক জমি লিখে দেন।
তিনি বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর বিভিন্ন সময়ে সৎ ছেলেরা আমার জায়গা জমি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য আমার উপর নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। স্বামীর মৃত্যুর ১৪ দিন পর সৎ ছেলে জসিম কৌশলে তাকে ঘরে ডেকে নিয়ে বেদম মারপিট করে এবং আমার ওষুধ পা দিয়ে পাড়িয়ে নষ্ট করে দেয়। স্বামী বেঁচে থাকা অবস্থায় অনেকবার তারা আমাকে ও স্বামীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে রক্তাক্ত জখম করে। সে সময় আমার মাথায় ৮ টি সেলাই দেয়া হয়। এছাড়া ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া, ধরন্ত শিম গাছ কেটে ফেলে দেওয়াসহ নানান ভাবে অত্যাচারসছে। এমনকি আমার একমাত্র ছেলে মাহফুজ কে তারা হত্যা করবে বলে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
নুরজাহান বেগম আরো বলেন, এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে জামিলের কাছে সৎ ছেলে কামাল বলেছে আমার নিজ ছেলে মাহফুজকে যেকোন মূল্যে হত্যা করবে। তাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে একজন জেল খাটলে কোন অসুবিধা হবে না বলেও সে হুমকি দেয়। সৎ ছেলেদের ভয়ে তারা এখন বাড়ি ছাড়া। সৎ ছেলেদের এসব কাজে সহযোগিতা করছে প্রতিবেশি নোনা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী এবং তার দু’ছেলে আনোয়ার ও সরোয়ার।
লিখিত অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, বেশ কিছু দিন আগে মোহাম্মদ আলীর দু’ছেলে আনোয়ার ও সরোয়ার হুমকি দেয় বাড়িতে আগুন ধরিয়ে ও বোমা মেরে উড়িয়ে দিবে। হুমকি দেওয়ার কয়েকদিন পর তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি আমার ধরন্ত শিম গাছ কেটে দেয়, ১১ মার্চ গভীর রাতে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাড়িতে নলকুপ স্থাপনের জন্য রক্ষিত ১০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। সে সময় তারা টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি ও বিষয়টি কাউকে জানালে ফলাফল খারাপ হবে বলে শাসিয়ে যায়।
বর্তমানে আমি সৎ ছেলেদের অত্যাচার নির্যাতনে ও নিজ ছেলে মাহফুজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে যেতে পারছি না। পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান খান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার কাছে অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সব খবর/ঝিনাইদহ/১৯ মার্চ ২০১৮/সোহলে