স্টাফ রিপোর্টার : আজ ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ট্রাজেডির ৫ বছর পূর্ণ হলো। ২০১৩ সালের এইদিন সাভারে রানা প্লাজার আটতলা ভবন ভেঙে পড়ে ১১শ’র বেশি পোশাক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিল প্রায় দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ওই ঘটনায় হত্যা, ইমারত নির্মাণ আইন এবং ইমারত নির্মাণে দুর্নীতি এ তিন অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। চার্জ গঠন হওয়ার পর প্রথম দুটি মামলায় গত ২ বছরে বিচার একচুলও এগোয়নি। এর আগের তিন বছরে প্রসিকিউশনের সাফল্য শুধু আদালতে চার্জশিট দাখিল ও চার্জ গঠন। আর ইমারত নির্মাণে দুর্নীতির মামলায় এখন বাদীর সাক্ষ্য চলমান।
এদিকে মামলা তিনটির মোট ৪২ আসামির মধ্যে একমাত্র ভবনটির মালিক সোহেল রানাই এখন কারাগারে। অন্য আসামিদের মধ্যে ৭ জন পলাতক, ৩২ জন জামিনে এবং ২ আসামি মারা গেছেন।
অন্যদিকে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার পর রানার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সম্পদের হিসাব দাখিল না করার মামলায় তিনি ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট ৩ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের একটি এবং শ্রম আদালতে শ্রমিকদের দায়ের করা আরও ১১টি মামলা বিচারাধীন আছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের মামলায় সোহেল রানার মা মোসা. মর্জিনা বেগমেরও ৬ বছরের কারাদন্ডের রায় দিয়েছেন আদালত চলতি বছরের ২৯ মার্চ।
২০১৫ সালের ১ জুন রানা, রানার মা-বাবাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে হত্যামামলায় চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর। এর পর প্রায় এক বছর ধরে মামলাটির পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের পর ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য আসে। এর পর ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। আসামিদের মধ্যে ৭ জন চার্জগঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে কোয়াশমেন্টের আবেদন করায় হাইকোর্ট মামলাটিতে নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করেন। সম্প্রতি ৬ আসামির স্থগিত আদেশ বাতিল হলেও আসামি কাউন্সিলর মো. আলী খানের স্থগিতাদেশ এখনো বহাল থাকায় আদালত এ পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ করতে পারেনি। এ সম্পর্কে পাবলিক প্রসিকিউটর খোন্দকার আবদুল মান্নান বলেন, একজন আসামির পক্ষে স্থগিত আদেশ এখনো ১২ মে পর্যন্ত রয়েছে। এর মধ্যে যদি বৃদ্ধির কোনো আদেশ না আসে তবে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করবে। তিনি আরও জানান, এর মধ্যে জামিনে থাকা সিদ্দিক ও আবুল হোসেন নামে দুজন আসামি মারা গেছেন। যার প্রতিবেদনও আমরা পেয়েছি।
ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে রানা প্লাজা ভবন নির্মাণ করায় ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ১৩ জনকে আসামি করে সাভার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায়ও হত্যা মামলার সঙ্গে ২০১৫ সালের ১ জুন পৃথক একটি চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির একই কর্মকর্তা। চার্জশিটে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে ১৭ জনই হত্যা মামলার আসামি।
২০১৬ সালের ১৪ জুন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।
চার্জগঠনের পর আসামিদের মধ্যে ৩ জন চার্জ আদেশ বাতিলের জন্য ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৃথক ৩টি রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ওই রিভিশন মামলার মধ্যে ২টি খারিজ হলেও অপর ১টি রিভিশন মামলা বিচারাধীন থাকায় মামলাটিতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করতে পারেননি আদালত।
এ সম্পর্কে ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুল বলেন, আমরা সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন বিচারাধীন থাকায় আদালত সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারছেন না।
রানা প্লাজা ভবনে ৬ তলা নির্মাণে অনুমোদন থাকার পরও ৯ তলা ভবন নির্মাণ করে দুর্নীতি করায় ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও দ-বিধির ১০৯ ধারায় সাভার থানায় ২০১৩ সালের ১৫ জুন মামলাটি করে দুদক।
মামলায় রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে প্রথম দফায় ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মফিদুল ইসলাম। পরে মামলাটিতে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ এম আতোয়ার রহমান ২০১৭ সালের ২১ মে চার্জ গঠন করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা নামক ভবনধসে ১ হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যায়। সে হিসাবে নিহত হয় ১ হাজার ১৩৬ জন।
সব খবর/ ঢাকা/ ২৪ এপ্রিল ২০১৮/ লিটন