চা বিক্রি করে জিপিএ ৫

কোরবান আলী, ঝিনাইদহ : মা মারা গেছে ৮ বছর আগে। বাবা আবার বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। সৎ মায়ের সংসার। তারপরেও লেখা পড়া চালিয়ে যেতে হবে। বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে চাকুরি করবে এমন স্বপ্ন জিহাদ শেখ নয়নের। সাধ থাকলেও তেমন সাধ্য নেই তার। স্কুলে ক্লাস আর বাবার চায়ের দোকানে কাজ। অনেক সময় টাকার জন্য রাজমিস্ত্রির কাজও করেছে। ঠিক মতো পড়াশোনা করতে পারেনি সে।
তারপরেও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীন শৈলকুপা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে ভোকেশনাল বিভাগের জেনারেল মেকানিক্স গ্রুপ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ অর্জন করেছে সে।

জিহাদ শেখ নয়ন শৈলকুপা উপজেলার মালিপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র সাহেব আলীর ছেলে। তার রোল নং: ৬৫৩৬১১, রেজি: নং- ৩৭১৪৮২।

শৈলকুপা উপজেলা শহরের সহকারী কমিশনার (ভূমি অফিস) এর কার্যালয়, অফিসের দেয়াল ঘেঁষে হালকা পাতলা গড়নের চায়ের দোকানী জিহাদ শেখ নয়ন। বেশিরভাগ চা পানকারী তাকে সাধারণ দোকানী হিসেবেই জানতো। স্কুলে ঠিকমতো যেতে পারেনি। বাবা সাহেব আলীর মাত্র ৫ শতক জমি আছে। চায়ের দোকানের আয় দিয়ে সংসার চলে। তার মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলে লেখাপড়া শিখে বড় হবে। নিজেও স্বপ্ন দেখেন সেনাবাহিনীতে চাকুরি করবে।

নয়ন জানান, লেখাপড়া ঠিক মতো করতে পারিনি। অধিকাংশ সময় চায়ের দোকানে কাজ করেছি। টাকার জন্য অনেক সময় রাজমিস্ত্রীর কাজ করেছি। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছি। উচ্চ শিক্ষা নিতে গেলে আরো বেশি টাকার দরকার। এত টাকা কোথায় পাবো? লেখাপড়া কি বন্ধ হয়ে যাবে বুঝতে পারছি না। নয়ন আরো জানান, ইচ্ছা আছে কোন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পড়াশোনার। এরপর সেনাবাহিনীতে চাকুরির জন্য আবেদন করবো। তবে নয়ন আরো জানান, লেখাপড়া চালাতে শুধু চা বিক্রিই নয় সম্মানজনক যে কোন কায়িক পরিশ্রম করতে বিন্দুমাত্রা দ্বিধা নেই তার।

নয়নের বাবা সাহেব আলী জানান, ছেলেটি ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়া ও খেলাধুলার প্রতি বিস্তর আগ্রহ। কিন্তু অর্থাভাবে ছেলের আশা পূরণ করতে পারি নাই। ছেলেটি অধিকাংশ সময়ই চায়ের দোকানে সময় কেটেছে।

শৈলকুপা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, সবার দোয়া ও সহযোগিতা থাকলে নয়নের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের নিকট তার লেখাপড়ার বিষয়ে তুলে ধরা হবে।

সব খবর/ ঝিনাইদহ/ ৮ মে ২০১৮/ লিটন