১৩ বছর পর মেয়েকে খুঁজে পেলেন বাবা

৯ বছর বয়সী নার্গিস আক্তারকে ঢাকার এক বাসায় কাজ করতে দিয়ে আসেন দরিদ্র বাবা আব্দুস সাত্তার। কপাল খারাপ হলে যা হয় আরকি—দেড় মাসের মাথাতেই বাবার আদরের ছোট্ট নার্গিস কীভাবে যেন ঢাকার শাহজাহানপুরের ওই বাসা থেকে হারিয়ে যায়। এরপর কেটে যায় ১৩টি বছর। পাল্টে যায় অনেক কিছু। নার্গিসের মাও দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে যান। চাঁদপুরের বাসিন্দা সাত্তারের বসত-বাড়ি চলে যায় নদীগর্ভে। উপায় না পেয়ে সাত্তার আশ্রয় নেন পাশের ইব্রাহিমপুরের মেঘনার চরে।

অনেক খুঁজে মেয়েকে না পেয়ে হাল ছেড়ে দেন সাত্তার। নার্গিস ২২ বছরের তরুণী। সিনেমার কোনো কাহিনি নয়, ৯ বছরের নার্গিস ২২ বছর বয়সে এসে ফিরে পেয়েছেন তাঁর বাবাকে। বাবা-মেয়ের এই মিলনে বড় ভূমিকা যাঁর, তিনি চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির। তাঁর মুখেই শোনা গেল নার্গিসকে উদ্ধারের কাহিনি। জানালেন, হারিয়ে যাওয়ার পর এবাড়ি–ওবাড়ি কাজ করেন নার্গিস। একসময় ঢাকা ছেড়ে চলে যান খুলনায়। সেখানেও দীর্ঘদিন গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। পরে আবার ফিরে আসেন ঢাকায়।

জিহাদুল কবির বলেন, ‘ঘটনাচক্রে ঢাকার মোহাম্মদপুরে আমার এক পরিচিতের বাসায় কাজ করতেন নার্গিস। নার্গিসের গৃহকর্তাই আমাকে তাঁর বাবার বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেন। জানতে পারি, নার্গিসের বাবার নাম সাত্তার। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের হরিণাঘাট এলাকায়।’

পরিচিত ওই ব্যক্তির কাছ থেকে নার্গিসের ঘটনা শুনে পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত মাহবুব মোল্লাকে সাত্তারের খোঁজ করতে বলেন। মাহবুব মোল্লাও সাত্তারের খোঁজে মাঠে নেমে পড়েন। একপর্যায়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের সাহায্যে সাত্তারের খোঁজ পান তিনি।
সাত্তারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর মুঠোফোনে বাবা-মেয়ের যোগাযোগ করিয়ে দেন পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির। মেয়ের সঙ্গে কথা বলে দেরি করেননি বাবা সাত্তার। বৃহস্পতিবার দিনের আলো ফুটতেই লঞ্চে চড়ে রওনা হন ঢাকার উদ্দেশে। একই দিন একই পথে মেয়েকে নিয়ে বাবা ফিরে আসেন আপন ঠিকানায়।

বৃহস্পতিবার লঞ্চ থেকে নেমে সোজা চলে যান চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেখানে পৌঁছান তাঁরা। এরপর নিজ বাড়িতে ফিরে যান বাবা-মেয়ে।