চার দিনেও বাসায় ফিরেনি দুই বান্ধবী, অপেক্ষায় স্বজনরা

লালবাগের বাসা থেকে বের হয়ে বুধবার বিকালে শিল্পকলা একাডেমিতে আবৃতির অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন ফাতেমা তুজ জোহরা বৃষ্টি ও তার বান্ধবী রেহনুমা তাবাসসুম দোলা (২১)।

শিল্পকলা একাডেমি থেকে রাতে ফিরছিলেনও একসঙ্গে। কিন্তু তারা বাসায় ফিরেননি। চার দিনেও তাদের হদিস মিলেনি। সেই রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ৬৭ জন। সেই পথে আসতে গিয়ে কী তারাও হারিয়েছেন প্রাণ? নাকি শিকার হয়েছেন অপহরণ বা অন্যকিছুর? এ বিষয়ে লালবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে বৃষ্টির পরিবার।

বৃষ্টির মা শামসুন্নাহার বলেন, আমার মেয়ে বুধবার বিকালে বান্ধবী দোলার সঙ্গে বাসা থেকে বেরিয়েছিল। শিল্পকলা একাডেমিতে আবৃতির অনুষ্ঠান ছিল। আবৃতি শেষে বাসায় ফিরেনি। তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল বৃষ্টি। সে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশু বিকাশ বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, মেয়ে আমার শাড়ি পরেছিল, নিজেকে সাজিয়ে বারবার তাগিদ দিচ্ছিল আমাকেও নিয়ে যেতে। কিন্তু ছেলের কোচিংয়ের জন্য আমি যেতে পারিনি। আমার ধারণা, চকবাজার ট্রাজেডিতে শেষ (মৃত্যু) হয়ে গেছে মেয়ে।

শনিবার দুপুরে পুরান ঢাকার লালবাগের রহিম বক্স লেনের ৪১/১ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির জন্য আহাজারি করছিলেন দাদি আয়েশা বেগম। তিনি বলেন, আমার নাতনিরে কেউ তুলে নিয়ে আটকে রেখেছে। আমার বিশ্বাস আমার নাতনি মরেনি। সে ফিরে আসবে। তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা কর সবাই মিলে। তিনি বলেন, যাওয়ার সময় দুটি মোবাইল ফোন নিয়েছিল। মার কাছ থেকে নিয়েছিল মাত্র একশ’ টাকা। আমি বলেছিলাম, সন্ধ্যার পর পরই ফিরে আসতে।

বৃষ্টির ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, শিল্পকলা একাডেমি ও বিভিন্ন বান্ধবীর মাধ্যমে তথ্য নিয়েছি। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। সিআইডির পরামর্শে ডিএনএ প্রোফাইলের জন্য রক্ত দেয়া হয়েছে। থানায় জিডিও করা হয়েছে। তবে আমাদের ধারণা, বৃষ্টি আগুনের পথে যায়নি। কোথাও কোনো চক্রের হাতে আটকে পড়ে আছে।

মোস্তাফিজুর আরও বলেন, বৃষ্টি ও দোলা সমবয়সী। চতুর্থ শ্রেণী থেকে তারা একসঙ্গে অগ্রণী স্কুলে পড়েছে। এরপর সিটি কলেজে। বৃষ্টি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে ভর্তি হলে দোলা মিরপুর বিওপি কলেজে ভর্তি হয়। তা সত্ত্বেও তাদের বন্ধুত্বে কমতি হয়নি। এমনকি তাদের পরিবারের সঙ্গেও আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। ওরা যে এভাবে একসঙ্গে হারিয়ে যাবে কল্পনাও করিনি। দোলার বাবার নাম খলিলুর রহমান ও মা সুফিয়া বেগম। সুফিয়া বেগম বলেন, আমার বিশ্বাস ওরা কেউই আগুনের কাছে যায়নি। বৃষ্টির সন্ধান পাওয়ার জন্য বাবা জসিম উদ্দিন ও ভাই সাইদুল ইসলাম সানি হাসপাতালের মর্গ থেকে চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডস্থলে খুঁজেছেন। কিন্তু কেউই সন্ধান দিতে পারেনি।

লালবাগ থানার ওসি সুবাস কুমার পাল বলেন, বৃষ্টির বাবা বৃহস্পতিবার ভোরে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এর তদন্ত চলছে। তাছাড়া ওরা কোথা থেকে নিখোঁজ হয়েছে তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, চকবাজারের আগুনের ঘটনায় পুড়েছে, নাকি কারও সঙ্গে গেছে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমাদের থানা এলাকায় বাসা, তাই আমরা জিডি নিয়েছি।