সোহেল হোসাইন: কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য নতুন বসতি-দিঘী-ডাউটিয়া সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। তবে সড়কটির সাড়ে তিন কিলোমিটার জুড়ে খনাখন্দ। সড়কটিতে যান চলাচর বন্ধ থাকায় আশেপাশের প্রায় ১০ গ্রামের চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
মানিকগঞ্জ জেলা শহরের খুব কাছেই নতুন বসতি, দিঘী ও ডাউটিয়া গ্রামের এই সড়কটি। প্রতিদিনই হাজারও লোকজন চলাচল করে এই রাস্তা দিয়ে। কিন্তু রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় খনাখন্দ ও গর্তের কারনে সাধারণ পথচারী সহ যান চলাচল খুবই ব্যাহত হচ্ছে। এতে ওই এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনে করে জেলাসহ রাজধানীতে পাঠাতে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন অর্থ। এলাকার মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও কৃষকদের প্রতিনিয়তই পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।
ভুক্তভোগী স্থানীয় বেশ কয়েকজন বলেন, সড়কটির নতুন বসতি থেকে রৌহাদহ পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার অংশের কার্পেটিং পুরোপুরি উঠে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় সড়কটির বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গেলো বন্যায় সড়কটি আরও বেহাল হয়ে পড়ে। নতুন বসতি, দীঘি মাঝিপাড়া ও কয়রা এলাকায় সড়কের মাটি ধসে গেছে। এ ছাড়া দীঘি মাঝিপাড়া এলাকায় সড়েকের সংযোগ সেতুটিও ডেবে গেছে। ফলে যাত্রীবাহী ছোট যান যেমন: টেম্পো, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সদর উপজেলার নতুন বসতি, দীঘি, কয়রা, চান নগর, পিতলাই, খরসতাই ও রৌহাদহ গ্রামের মানুষ। হেঁটে বা রিকশা-ভ্যানে করে মানুষকে জেলা সদরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
এলজিইডির সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সড়কটির চার কিলোমিটার কার্পেটিং করা হয়। সড়কটির মেরামতের জন্য জরিপসহ প্রাথমিক সব কাজ সম্পন্ন করা হয়। এবারের বন্যায় সড়কটি বেশ ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
গত রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন বসতি, দীঘি মাঝিপাড়া, কয়রা ও রৌহাদহ এলাকায় সড়কটি বিভিন্ন জায়গায় ডেবে গেছে। এ ছাড়া নতুন বসতি থেকে রৌহাদহ পর্যন্ত সড়কের সবখানেই কার্পেটিং উঠে খানাখন্দ এবং বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় খরসতাই গ্রামের রিকশাচালক আবুল মিয়া বলেন, ‘এই রাস্তায় রিকশা চালাইলে চাকার স্পোক ভেঙে যায়। ঘন ঘন রিকশাও নষ্ট হয়।’
কয়রা গ্রামের কলেজছাত্রী শিমলা আক্তার বলে, প্রায় প্রতিদিনই কলেজ ও প্রাইভেট পড়তে জেলা শহরে যেতে হয়। কিন্তু রাস্তা খারাপ থাকায় এই সড়কে রিকশাও পাওয়া যায় না। এ কারণে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে নতুন বসতি যেতে হয়। এরপর সেখান থেকে রিকশা বা ইজিবাইকে জেলা শহরে যেতে হয়।
স্থানীয় দীঘি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফুলচান মিয়া বলেন, সংস্কার না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নতুন বসতি ও দীঘি মাঝিপাড়া এলাকায় সড়কের কিছু অংশে খোয়া ফেলা হয়। তবে তা একেবারেই সীমিত। চলাচলে দুর্ভোগের পাশাপাশি আশপাশের এলাকা থেকে কৃষিপণ্য পরিবহনে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ।
নতুন বসতি গ্রামের বাসিন্দা ও জেলা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক হাবিবুল মোমেন বলেন, দুই বছর ধরে জেলা শহরের মাত্র এক কিলোমিটার দূরের এই সড়কটি বেহাল। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এত দিনেও সংস্কার না হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সদর উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন বলেন, প্রায় বছরখানেক আগে সড়কটি সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করা হয়। সড়কটি পুনরায় মেরামতকাজের জন্য ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
এলজিইডির সদর উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান বলেন, সড়কটির উন্নয়নকাজের বরাদ্দের জন্য এলজিইডি অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সড়কটি দ্রুত মেরামত করা হবে বলে তিনি জানান।
সব খবর/মানিকগঞ্জ সদর/ ১৬ জানুয়ারী ২০১৮/সোহেল