মানিকগঞ্জে হাসপাতালে কাঁতরাচ্ছেন নির্মম নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ

স্টাফ রিপোর্টার : বিয়ের সময় টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার যৌতুক দেওয়া হয়। এরপর স্ত্রীর বাবার কাছে আরও টাকা দাবি করেন। তবে দরিদ্র বাবা সেই টাকা দিতে না পারায় আঁখি আক্তারকে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। সারা শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত নিয়ে হাসপাতালে শয্যায় কাঁতরাচ্ছেন তিনি। তাঁর একটি পায়ের রগও কেটে ফেলা হয়েছে।

গত ৪ আগস্ট মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের বড়ইচড়া গ্রামে এই নির্যাতনের শিকার হন ওই গৃহবধূ। জেলা সদর হাসপাতালের সপ্তম তলায় নারী ওয়ার্ডে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কেটে যাওয়া আঁখি আক্তারের দুই গালে অসংখ্য সেলাই। হাতে, ঘাড়ে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানেও কাটাস্থানে সেলাই দেওয়া হয়েছে। ডান পায়ে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর ব্যথায় কাঁতরাচ্ছিলেন তিনি। পাশে বসে সেবাযত্ন করছেন ভাই লাল চান।

ওই গৃহবধূর স্বজনেরা জানান, প্রায় ছয় বছর আগে বড়ইচড়া গ্রামের মৃত তারাব আলীর ছেলে খোকন মিয়ার সঙ্গে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার পাঞ্জিপহরী গ্রামের হাকিম আলীর মেয়ে আঁখি আক্তার (২৭) বিয়ে হয়। বিয়ের সময় টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার দেওয়া হয়। জান্নাত নামে তাঁদের চার বছরের মেয়ে রয়েছে। খোকন ঢাকার একটি রেস্তোরায় কুকার হিসেবে কাজ করেন।

দুই বছর আগে শ্বশুরের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেন খোকন। এর এক মাস পর তিনি বাবার বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে চাপ দিতে থাকেন। তবে দরিদ্র বাবা সেই টাকা দিতে না পারায় আঁখিকে প্রায়ই মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করতেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গত শনিবার বিকেলে দাবি করা সেই তিন লাখ টাকা নিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে খোকন ধারালো ছুড়ি দিয়ে আঁখিকে এলোপাথারি আঘাত করতে থাকেন। এতে আঁখির দুই গাল, ঘাড়, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক ক্ষত (কেটে যায়) হয়। খবর পেয়ে স্বজনেরা ওই বাড়িতে গিয়ে আঁখিকে গুরুতর আহত অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা করেন।

আঁখির ভাই লাল চান বলেন, সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওই দিন রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর বোনকে ভর্তি করা হয়। সকালে তিনি হাসপাতালে বাইরে বের হলে  খোকন আহত অবস্থায় আঁখিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বড়ইচড়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। ওইদিন দুপুরে আবারও ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে তাঁরা পূনরায় জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ বিষয়ে খোকন মিয়ার মুঠোফোন নম্বরে (০১৭১৯-৪৬৬০৪৩) একাধিকবার কল করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। সদর হাপপাতালে কথা হলে আঁখির শাশুড়ি বলেন, ওই দিন ঘরের ভেতর তাঁর ছেলে বউকে কোপায়। তবে কি কারণে কোপায় তা জানেন না।

আঁখির চাচাত ভাই অলোক মিয়া জানান, ক্ষমতাসীন দলের এলাকার এক নেতার ছত্রছায়ায় থাকেন খোকন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। পরে গত বুধবার লাল চান (আঁখির ভাই) বাদি হয়ে ভগ্নিপতি খোকন, বোনের শাশুড়ি মানিকজান বিবি ও খোকনের বড় বোন রুবিয়াকে আসামি করে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।

মামলার আইনজীবী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলাটি হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নথিভূক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করতে আসেননি। ট্রাইব্যুনালের কোনো নির্দেশের কাগজও তিনি পাননি।

সব খবর/ মানিকগঞ্জ/ ১২ আগষ্ট ২০১৮/ নিউজ ডেস্ক