বিশেষ প্রতিবেদক : ফুল চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার শতশত ফুল চাষী। বানিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি তারা বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানেও সুযোগ করে দিয়েছেন।
উপজেলার জয়মন্টপ, ধল্লা, দশআনি, বাস্তা, খাসেরচর, ফোর্ডনগর, বাইমাইল, জামালপুর, চাড়াভাঙ্গা, কালিয়াকৈরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ফুল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। ওইসব রঙিন ফুলে গাথা রয়েছে তাদের জীবনের প্রতিটি স্বপ্ন। স্থানীয় ফুল দখল করেছে শাহবাগের বাজার। সিংগাইরের জমি ফুল চাষের জন্য বেশ উপযোগি। অল্প সময় আর কম খরচের কারণে সিংগাইরে দিন দিন ফুল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলার ফোর্ডনগর গ্রামের ফুলচাষী আক্কাছ আলী জানান, ধলেশ্বরী নদী দ্বারা প্রবাহিত হওয়ায় গ্রামের চারপাশ শুধু বালু আর বালু। যে কারণে এসব জমিতে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়না। তিনি আরোও জানান, ২০০৩ সালে মনের খেয়ালে বাড়ির আঙিনার ৫ শতক জমিতে তিনি ফুল চাষ করেন। প্রথমবার ভাল লাভ পাওয়ায় পরের বছর আরো ৪ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করি। এখন ফুল চাষ করেই তার সংসার চলছে।
আক্কাছের স্ত্রী ফুলবানু জানান, এক সময় স্বামী সন্তান নিয়ে খুব কষ্ট করে সংসার চলতো। স্বামীর স্বল্প আয়ে কোন রকম দিনপাত করেছি। ঘর বাড়ি পাকা করে এখন আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছি। শুধু তাই নয় আমাদের ফুলবাগানে এখন ২০/২৫ জন শ্রমিক কাজ করে তাদের সংসার চালাচ্ছেন।
জয়মন্টপ গ্রামের কৃষক আব্দুল আলী জানান, আগে কৃষিকাজ করতাম কিন্তু লাভ কম। এক শতাংশ জমিতে ধান হতো ১৫ থেকে ২০ মণ। খরচ পড়ত ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ধানের দর ভালো না হলে লোকসানও হতো। কিন্তু ফুলচাষে মাত্র একবার বিনিয়োগ করতে হয়। কিন্তু এক থেকে দেড় বছরের ভেতর বিনিয়োগের টাকা উঠে আসে। এরপরের কয়েক বছর শুধু লাভ।
বাস্তা গ্রামের চান মিয়া জানান, প্রথমে অল্প পরিমান জমিতে গোলাপ, গাদা, জিপসি. ক্যান্ডেলিনা, গ্যালোডিওলাসসহ বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করেছিলাম। অন্যের ২২ বিঘা জমি লীজ নিয়ে বৃহৎ পরিসরে ফুলের বাগান করেছি। বাবার কাছ থেকে লাখ খানেক টাকা নিয়ে কাজটি শুরু করেছিলাম। জমি খরচ, শ্রমিক, সার, কীটনাশক সব খরচ মিটিয়েও মৌসুমে কয়েক লাখ টাকা লাভ হচ্ছে।
ফুল চাষী আজগর আলী ও কহিনুর ইসলাম জানান, বীজ বপনের ৩ মাসের মধ্যেই ফুল পাওয়া যায়। তাই এ চাষে হাতে নগদ টাকা পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি। বাজারে ফুলের প্রচুর চাহিদা থাকা সত্বেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ফুল চাষিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. একে এম নাজমুল হক জানান, শুরুতে কয়েকজন লোক ফুলের চাষ শুরু করেন। অল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন এ চাষে এলাকার লোকজন আগ্রহী হয়ে উঠে। এখন সিংগাইরের বিভিন্ন গ্রামে বানিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে এবং কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এব্যাপারে কৃষি বিভাগ চাষিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে।
সব খবর/ মানিকগঞ্জ/ সিংগাইর/ ৩০ জানুয়ারি ২০১৮/ লিটন