সোনাগাজীর সেই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি বাতিল

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সোনাগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ১৩ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি বাতিল (বিলুপ্ত) ঘোষণা করেছে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাও. মোহাম্মদ হোসাইন জানান, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. আহছান উল্লাহ কমিটি বাতিল (বিলুপ্তির) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, আগামী ২-১ দিনের মধ্যে ৫ সদস্যবিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করা হবে।

গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার এক ছাত্রী সহপাঠী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে, এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই ভবনের তিনতলায় যান। সেখানে মুখোশধারী বোরকা পরিহিত ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। তিনি অস্বীকৃতি জানালে গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান নুসরাত।

নুসরাত হত্যার ঘটনায় দুই দিনব্যাপী ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশের গাফিলতি তদন্ত কমিটির প্রধান পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি মো. রুহুল আমীন সাংবাদিকদের বলেছেন, ২৭ তারিখের যৌন হয়রানির ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, ম্যানেজিং কমিটি ব্যবস্থা নিলে নুসরাতের গায়ে আগুনের ঘটনা এড়ানো যেত।

ডিআইজি মো. রুহুল আমীনের নেতৃত্বে একজন পুলিশ সুপার, দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও একজন পরিদর্শক এ তদন্তে উপস্থিত ছিলেন।

ডিআইজি মো. রুহুল আমীন বলেন, তদন্ত কার্যক্রম শেষ হতে আরও তিন-চার দিন সময় লাগতে পারে। নথিপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। সাধারণ একটি মামলা তদন্ত করতে এক মাস সময় লাগে। এটি একটি বড় ঘটনা, তাই কিছুটা সময় লাগবে।

তিনি বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনেক খারাপ হিস্ট্রি রয়েছে। যা গভর্নিং বডির সদস্যরাও জানত। যদি তার ব্যাপারে আগে ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে আজকে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। এই ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতির বিষয়ও জড়িত রয়েছে।

রুহুল আমীন বলেন, একই দলের দুজন কাউন্সিলর অধ্যক্ষের পক্ষে বিপক্ষে মানববন্ধন করেছে। প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে পুরোপুরি তদন্ত শেষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের আনুষ্ঠানিক জানানো হবে।

মাদ্রসার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বুধ ও বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ঘটনা সম্পর্কে তাদের মতামত গ্রহণ করেন। বুধবার তারা রাফির বাড়িতে গিয়ে রাফির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখান থেকে সোনাগাজী আলহেলাল একাডেমিসংলগ্ন সামাজিক কবরস্থানে গিয়ে রাফির কবর জেয়ারত করেন।

বৃহস্পতিবারও কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য, রাফির পরিবার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও কর্মচারীদের মতামত গ্রহণ করেন এ তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার তিন দিন পর পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার প্রাথমিক তদন্তের বিষয়গুলো উল্লেখ করে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) একটি প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে সোনাগাজীর ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।