সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দীন আলী হাসপাতালে

সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দীন আলী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে এগারোটায় তাঁকে মহাখালীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিনি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। বাংলাদেশের এই সুর সম্রাটের হঠাৎই অসুস্থতার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন তাঁর স্ত্রী ফারজানা মিমি।

ফারজানা মিমি জানান, আলাউদ্দীন আলীকে বর্তমানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত আলাউদ্দীন আলী বাংলা গান, বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান সৃষ্টি করেছেন। তিনি একাধারে সংগীত পরিচালক, সুরকার, বেহালাবাদক ও গীতিকার। গান লিখে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। গুণী এই মানুষটির জন্ম ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর, মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের টঙ্গিবাড়ী থানার বাঁশবাড়ী গ্রামে। তাঁর বাবা ওস্তাদ জাদব আলী। মায়ের নাম জোহরা খাতুন।

দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দীন আলী। তিন ভাই, দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হতে থাকেন এই গুণী শিল্পী। সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। পরে ১৯৬৮ সালে যন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন। শুরুটা শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে, পরে প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজের সঙ্গেই কাজ করেন দীর্ঘদিন।

লোকজ ও ধ্রুপদি গানের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা আলাউদ্দীন আলীর সুরের নিজস্ব ধরন বাংলা সংগীতে এক আলাদা ঢং হয়ে উঠেছে বিগত প্রায় চার দশক ধরেই। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের বহু স্বনামধন্য শিল্পী তাঁর সুরে গান করে নিজেদের করেছেন সমৃদ্ধ।

আলাউদ্দীন আলীর উল্লেখযোগ্য কিছু সৃষ্টি

“সুখে থাকো, ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি”
“সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ”
“বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না”
“যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে, মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে”
“প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ”
“এমনও তো প্রেম হয়, চোখের জলে কথা কয়”
“সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে রে”
“আমায় গেঁথে দাওনা মাগো, একটা পলাশ ফুলের মালা”
“আছেন আমার মুক্তার, আছেন আমার ব্যারিস্টার”
“শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে”
“কেউ কোনো দিন আমারে তো কথা দিল না”
“পারি না ভুলে যেতে, স্মৃতিরা মালা গেঁথে”
“জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো”
“আমার মনের ভেতর অনেক জ্বালা আগুন হইয়া জ্বলে”
“যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়”
“ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়”, প্রভৃতি।