`সমৃদ্ধ ও আধিপত্যমুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার স্বার্থে সার্কের পুনরুজ্জীবন জরুরি’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, শক্তিশালী সার্ক গঠনে বাংলাদেশী তরুণদের প্রাক ভারতীয় বা ভারত বিরুদ্ধ হলে চলবে না। আমাদের প্রকৃত বাংলাদেশী হতে হবে। সার্ক রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়াতে হবে।

আজ (৩১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টার কর্তৃক আয়োজিত “Strengthening SAARC and the Role of the Bangladeshi Youth” শীর্ষক একটি গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান সুমন হক এতে সভাপতিত্ব করেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, সার্ক এই অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভারত তার নিজের স্বার্থে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রায়ই বাধা তৈরি করে। সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার স্বার্থে তরুণ সমাজকে সার্ক নিয়ে ভাবতে হবে এবং অন্যান্য সার্ক রাষ্ট্রসমূহের তরুণ সমাজের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। সার্ক থেকে ভারতকে প্রত্যাহার বা চীনের অন্তর্ভুক্তির চেয়ে বড় বিষয় হলো বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে ভারত ঘেঁষা মনোভাব পরিহার করে সার্কের রাষ্ট্রসমূহের সাথে সমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপন করে সকল আধিপত্যবাদী শাসন ও শোষণ দূর করতে বর্তমান সময়ে সার্ককে পুনরুজ্জীবন করা জরুরি।

মূল প্রবন্ধের বক্তৃতায় সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী বলেন, সমৃদ্ধ ও আধিপত্যমুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার স্বার্থে সার্ককে পুনর্জীবিত করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার নিজস্ব পরিচয় বিনির্মানে সার্ক প্রয়োজন। ইউরোপ যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেদের এক ছাতার নিচে এনে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সারা বিশ্বকে জানান দিচ্ছে তেমনি কমবেশি একই সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনৈতিক ধারার দক্ষিণ এশিয় জনগোষ্ঠীকে সার্কের একই ছাতার নিচে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু বিভিন্ন সময় দেখা গেছে ভারত রাষ্ট্র হিসেবে তার আধিপত্যবাদী মানসিকতায় কেবল নিজের প্রয়োজনে সার্ককে দূর্বল করে রাখে। ভারত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়ে নিজের প্রয়োজনের কথা বলে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা বলে কিন্তু সার্ক অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশ – নেপালের যোগাযোগ কাঠামোকে ভারত সহায়তা করেনি। সার্কের কাঠামোর মধ্যে আমলাতান্ত্রিক নিয়োগের বদলে রাজনীতিবিদদের দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড চালানো উচিত।

তিনি আরো বলেন, সার্কের অনেক অর্জন আছে। কিন্তু সার্কের অন্তর্ভুক্ত ভারত নামক রাষ্ট্রের বিগ-ব্রাদার সুলভ আচরণ সার্কের অনেক অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। বর্তমানে করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটকালীন সময়ে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় দূর্যোগের যে ঘনঘটা এবস্থায় সার্ককে আরো বেশি শক্তিশালী করা প্রয়োজন। ভারতীয় আধিপত্য পরিহার, পারস্পরিক সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সবকিছুর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নিজের জাতীয়তাবোধকে জাগ্রত করে অপরের জাতীয়তাবোধকে সম্মানের জায়গায় রেখে তরুণ সমাজকে সার্ককের দর্শনে বিশ্বাসী হতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক কর্ণেল (অবঃ) আশরাফ আল দীন বলেন, দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নিয়ে সার্কের রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ করতে পারে না। ভারত এখানে বাঁধা। কাশ্মীরীদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেলে ভারত বাঁধা দেয়। বাংলাদেশী তরুণদের নিজেদের আত্মপরিচয়, জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে সচেতন হয়ে বাংলাদেশকে নতজানুতার বিরুদ্ধে জাগ্রত হতে হবে। তরুণদের জ্ঞানার্জন করতে হবে। সার্ক সংস্কৃতিকে মনস্তাত্তি¡কভাবে তরুণদের ধারণ করতে হবে। ভারতীয় আধিপত্যবাদী মানসিকতা, নেতিবাচকতার শৃংখলকে ভাংতে হলে তরুণদের জ্ঞানার্জনের বিকল্প নাই। আমাদের দক্ষ কর্মশক্তিকে সার্ক রাষ্ট্রসমূহে কাজ করতে দেয়ার সুযোগ প্রদান করতে হবে। আমাদের টিভি চ্যানেলসমূহ ভারতে প্রদর্শনসহ উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা সহজীকরণের ক্ষেত্রে ভারতকে স্বচ্ছ হতে হবে।

বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ভারতে শাসকদল সাম্প্রদায়িকার যে বীজ বুনে চলেছে তা শুধু ভারতকেই নয় বরং সার্কের অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এবং ঘৃণার রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিত্রাণের জন্য সার্ককে শক্তিশালী করা জরুরি। বহু সংস্কৃতিবাদ প্রতিষ্ঠায় সার্ককে পূনরুজ্জীবিত করতে হবে। প্রভুত্বসূলভ মানসিকতাকে ভেঙে ফেলতে সৌহার্দ্য ও সম্প্রতির দক্ষিণ এশিয়াকে গড়ে তুলতে সার্কের প্রয়োজন অপরিহার্য।