চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচন-২০১৯: লক্ষ্য অর্জন এবং ব্যর্থতা

২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এর মধ্যে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান আবারও প্যানেলবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে চিত্রনায়িকা মৌসুমী সভাপতি এবং ডিএ তায়েব সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আরেকটি প্যানেল নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গত দুবছরের অর্জন, ব্যর্থতার পাশাপাশি আগামী বছরগুলোয় কোন লক্ষ্যে কীভাবে এগিয়ে যাবেন এবং সম্ভাব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে মৌসুমী ও ডিএ তায়েবের লক্ষ্য এবং বিগত কমিটির ব্যর্থতা কী ছিল তা নিয়ে কথা বলেছেন যুগান্তরের সঙ্গে।

শিল্পী সমিতির সমস্যা কী সেটা আমরা সবাই জানি – মৌসুমী

সবারই লক্ষ্য থাকে মানুষের কল্যাণ করার, আমারও একই। তবে আলাদা করে বলতে গেলে নির্বাচিত হলে শিল্পীদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করব। শিল্পীদের নান্দনিকভাবে কাজের মূল্যায়ন করা, তাদের বিপদে পাশে থাকা সবকিছু। আমি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী, তাই কাজ করে দেখাতে চাই। শিল্পী সমিতির সমস্যা কী সেটা আমরা সবাই জানি। নতুন করে বলতে হবে না। আশা করি, এসব সমস্যা আমরা খুব সহজেই মিটিয়ে ফেলতে পারব।

অসহায় শিল্পীদের জন্য একটি অনুদান সরকারের মাধ্যমে আনার চেষ্টা চলছে, সবকিছুই ভালো পথেই আছে। আমি সব সময় শিল্পীদের ভালো চাই এবং তাদের পাশে থেকেই ভালোটা আরও ভালো করতে চাই।

বর্তমান কমিটি নিয়ে কিছুই বলার নেই আমার, তাদের ব্যর্থতা নিয়েও বলতে চাই না। কারণ এ কমিটিতে নির্বাচিত হলেও শুরুতেই পদত্যাগ করেছি। তবে আমার নিজের দিক থেকে মাঝে মাঝে মনে হয়েছে, অনেক কিছুই ঠিক হয়নি, অনেক কাজ হয়নি। এর বেশি কিছুই এখন বলতে চাই না। সুস্থ চিন্তার পথে অগ্রসর এবং সব শিল্পী ভালো থাকবে এমনটা হওয়া উচিত।

আমার জায়গায় মৌসুমী এলে তাকে স্বাগত জানাব : মিশা সওদাগর

জয়-পরাজয় নিয়েই নির্বাচন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি একটি অরাজনৈতিক এবং সেবামূলক সংগঠন। আমরা দুবছরে কী উন্নয়ন এবং অর্জন করেছি এটি সবার জানা। জীবন্ত কিংবদন্তি উপদেষ্টা নামক একটি কমিটি করেছি, যেখানে সোনালি দিনের তারকারা রয়েছেন। অনেক সিনিয়র শিল্পী সমিতিতে এলে বসার জায়গা ছিল না, আমরা সেটা করেছি। সমিতির সামনে বাগান থেকে শুরু করে অবকাঠামো ঠিক করেছি। ঈদ কিংবা পূজায় শিল্পীদের ভাতার ব্যবস্থা করেছি, কোরবানির ঈদে পাঁচটি গরু কোরবানি করেছি শিল্পীদের জন্য। শিল্পীদের কেউ অসুস্থ থাকলে খবর নেয়া সেবাদানসহ ফান্ড তৈরি করেছি।

সামনে লক্ষ্য কী বা কী কাজ করব সেটা নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ থাকবে। যে কাজগুলো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে আবারও নির্বাচিত হলে সেগুলো বাস্তবায়ন করব। আর বেশি কিছু বলতে চাই না। শুধু চাই একটি সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। আমার জায়গায় মৌসুমী এলে তাকেও স্বাগতম। আমি চাই শিল্পীদের উন্নতি, শিল্পের উন্নয়ন। মৌসুমী যদি আমার চেয়ে ভালো করতে পারে তাহলে কোনো সমস্যা নেই। আর জয়-পরাজয় নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত নই। জিতলে আমি বাজিগর, হারলেও বাজিগর।

আমরা সিনেমাশিল্পের তেমন উন্নয়ন ঘটাতে পারিনি : ডিএ তায়েব

প্রথম কথা হচ্ছে আমি জিতি বা হারি এ নিয়ে আমার কোনো কষ্ট থাকবে না। যদি ভালো কিছু করতে হয় তার জন্য আসনের দরকার হয় না। কিন্তু তারপরও কথা বলার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা লাগে। সে কারণেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মূল লক্ষ্য শিল্পীদের পাশে থাকতে চাই। অসহায়-দুস্থ শিল্পীদের নিয়ে কিছু করার ইচ্ছা আছে এবং উচ্চ পর্যায়ে আলাপ করার জন্য সঠিক লোকবল দরকার আছে। এটা সবাই জানেন এখন পর্যন্ত শিল্পী ঐক্যজোট নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পীকে প্রায় ১২ কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে। শিল্পী সমিতির মাধ্যমেও এ কাজটি আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

বর্তমান কমিটির ব্যর্থতা নিয়ে আমি সাংগঠনিকভাবে কিছুই বলতে চাই না। বিগত বছরগুলোতে কী ঘটেছে সেটা সবাই জানেন। মিশা ভাই কিংবা জায়েদ- দু’জনই আমার খুব কাছের। তবে এতটুকু বলতে চাই, আমাদের ভাগ্যের কিন্তু কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আমরা সিনেমার তেমন কোনোই উন্নয়ন ঘটাতে পারিনি। প্রযোজকদের গাইড দিতে পারিনি এবং এ এত বিভাজন শিল্পীদের মধ্যে এটা এখনও কাটেনি। সব দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে হবে। তা নাহলে একসঙ্গে কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়বে। যদি এমনটি হয়েও যায় তাহলে তা সিনেমার জন্য খুবই খারাপ হবে।

সিনেমাশিল্প আবারও সোনালি দিন ফিরে পাবে : জায়েদ খান

শিল্পী সমিতির জন্য কী করেছি এটা সবারই জানা। অনেক কিছুই হয়তো অর্জন করেছি। এসব নিয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনের সবাই অবগত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে সব শিল্পীর ভালোবাসা পেয়েছি। সিনিয়র যেসব শিল্পী এফডিসিবিমুখ ছিলেন তারা আজ সমিতিতে এসে গল্প করেন, আড্ডা দেন, জুনিয়রদের খোঁজখবর নেন- এটাই আমাদের অনেক বড় প্রাপ্তি। মূল কথা হচ্ছে, শিল্পীদের স্বার্থরক্ষায় সব সময় অটুট ছিলাম।

এ ছাড়া যৌথ প্রযোজনার নামে যে যৌথ প্রতারণা চলছিল তা আন্দোলন করে বন্ধ করেছি সবাই মিলে। শিল্পী সমিতির ইতিহাসে তিনটি ইফতার, দুটি পিকনিক আমাদের কমিটি করেছে। এ ছাড়া শিল্পী সমিতির অবকাঠামোগত সৌন্দর্যবৃদ্ধি, প্রয়াত শিল্পীদের জন্য দোয়া ও মিলাদের আয়োজন, তাদের মনে রাখতে স্মৃতিবিজড়িত বই, চলচ্চিত্র শিল্পী-কলাকুশলী কল্যাণ ট্রাস্ট যেটাতে প্রধানমন্ত্রী ৫০ কোটি টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ অ্যাকশন ডিরেক্টর ও স্থির চিত্রগ্রাফারের ক্যাটাগরি যোগ করাসহ শিল্পী সমিতিকে আমরা আরও সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে এসেছি। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ডাক এলে শিল্পী সমিতির সেখানে সরব উপস্থিতি।

ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হচ্ছে, যেসব শিল্পী আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদের জন্য একটি আবাসন সিটি করা। যদিও এ বিষয় নিয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। শিল্পীরা যেন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে সেদিকে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখব। সিনেমাশিল্প আবারও সোনালি দিন ফিরে পাবে- এ চেষ্টায় সবার দুয়ারে যাওয়া এবং সবাই মিলে কাজ করা। আলাদা একটি তহবিল গঠন করে শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে সিনেমা প্রযোজনা এবং নির্মাণ করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ ছাড়া একটি অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করব, যাতে এফডিসির সবার কাজে লাগে। সূত্র: যুগান্তর।