এসেছে মশক নিধনের নতুন ওষুধ

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে চীন থেকে নতুন ওষুধের নমুনা আমদানি করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ভারত থেকে এনেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর মধ্যে ডিএসসিসি ওষুধের নমুনা প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করেছে। দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং খামারবাড়ির উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখায়। ডিএনসিসি ওষুধের মান পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ফলাফল কী হয় সে বিষয়ে আগেভাগেই কিছু বলতে চাইছেন না ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেখা যাক কী হয়।’

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা ভারতের ‘ইন্ডিয়া বায়ার করপোরেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন ওষুধের নমুনা এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছি। প্রথম ধাপের পরীক্ষা শেষে খামারবাড়ি ও আইইডিসিআর-এ পাঠানো হয়েছে। দেখা যাক রিপোর্টে কী আসে।’

গত শুক্রবার ভারত থেকে আমদানি করা নতুন ওষুধের মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষা চালায় ডিএসসিসি। নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে তিনটি খাঁচার প্রতিটিতে ৫০টি মশা রেখে পরীক্ষা চালানো হয়। দু-তিন ফুট দূর থেকে মশার ওষুধ স্প্রে করা হয়। ৩০ মিনিটের পরীক্ষা শেষে প্রথম খাঁচার ৫০টি মশার মধ্যে ১৩টি, দ্বিতীয় খাঁচার ১৪টি এবং তৃতীয় খাঁচার ৯টি মশা জ্ঞান হারায়।

কলকাতা থেকে আসা মশক গবেষক শুভ দে জানান, নতুন ওষুধে মশা মরতে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। এ সময়ের মধ্যে ৮০ শতাংশ মশার মৃত্যু হলে ধরে নেওয়া হবে ওষুধের মান ঠিক আছে। আর বায়ার করপোরেশনের মশার ওষুধ মশা নিধনে কার্যকর। এই ওষুধে যেন পরিবেশের ক্ষতি না হয়, সেদিকটাও লক্ষ্য রাখা হয়।

জানা গেছে, গতকাল ২৪ ঘণ্টা শেষে ওষুধের কার্যকারিতা পাওয়া যায়। পরে ওই ওষুধের নমুনা আইইডিসিআর ও খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এখন বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে যা মতামত দেবেন, তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এ ওষুধ ব্যবহার করা হবে কি-না।

গতকাল শনিবার বিকেলে আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, ‘প্রথম ধাপের পরীক্ষায় মশা মরলে সেটি মাঠ পর্যায়েও মরার কথা। তবে পরীক্ষা রিপোর্টে কী এলো, সেটা তারা বলবেন না। সিটি করপোরেশনকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

এদিকে গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে নতুন ওষুধের নমুনা ডিএনসিসির হাতে পৌঁছে বলে জানান ডিএনসিসির এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, ‘ওষুধটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।’

তবে জানা গেছে, আইইডিসিআর এবার কিউলেক্স ও এডিস মশার ওপরেও পরীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত হওয়ার জন্যই এ পদ্ধতি তারা অবলম্বন করতে চায়। কিন্তু মাঠ পর্যায় থেকে এডিস মশা সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা বিপাকে পড়েছে। এ জন্য তাদের পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে বিলম্ব হতে পারে।

সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আইইডিসিআর তাদের ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করত। কিন্তু সেটা কেবল কিউলেক্স মশার ওপর ভিত্তি করেই করা হতো। এডিস মশার পরীক্ষা করা হতো না। যে কারণে এবার তারা ওষুধের পরীক্ষা এডিস মশার ওপরেও করতে চান। এ বছর যেহেতু ডেঙ্গু রোগের প্রভাব বেশি, সে কারণে সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়েছে, এডিস মশার ফলও দিতে হবে। কিন্তু আইইডিসিআর বলছে, তারা এডিশ মশা খুঁজে পাচ্ছে না। মশা সংগ্রহ করতে সময় লাগছে। এ জন্য তারা আরও এক সপ্তাহ সময় চাইছে।

তিনি বলেন, কিউলেক্স মশার প্রাণশক্তি এডিস মশার চেয়ে বেশি। ওষুধে কিউলেক্স মশার মৃত্যু হলে এডিস মশাও মরবে। এ জন্যই এতদিন কেবল কিউলেক্স মশার ওপর পরীক্ষা চলত। কিন্তু এবার ডেঙ্গু জ্বরের ধরন পাল্টে যাওয়ার কারণে দুই মশার ওপরেই পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ওষুধের মান সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।