ঈদে ভোগান্তির আশঙ্কা রেল ও সড়কপথে

বন্যা বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থায় সারা দেশে রেল ও সড়কপথের ঈদযাত্রায় ব্যাপক ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ জেলা বন্যায় দুই সপ্তাহের বেশি নিমজ্জিত থাকার পর ক্ষতবিক্ষত সড়কের বেহাল অবস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গুরুত্বপূর্ণ ১১টি মহাসড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক এলাকায় এখনো ভারী যান চলাচল বন্ধ আছে। কোথাও পানি নেমে গেলেও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথও ঈদযাত্রার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেলপথ। গুরুত্বপূর্ণ আটটি রুটে ট্রেন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। বন্ধ হয়ে পড়েছে একাধিক রুট। এবারের বন্যায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার রেলপথ। গত ১৬ জুলাই থেকে টানা ১৯ দিন ঢাকার সঙ্গে গাইবান্ধার রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঈদের আগে এই পথে ট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে কি না সেটিও এখনো নিশ্চিত নয়।

আসন্ন ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেল ও সড়কপথে ভোগান্তিতে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোরবানির ঈদের আগে আট দিনে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক যান চলাচল উপযোগী করে তোলার সম্ভাবনা কম। বন্যার পানি পুরোপুরি সরে না গেলে সংস্কার কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার ঈদযাত্রা স্বাভাবিক গতি হারাবে। রেলপথও পুরোপুরি ব্যবহার করা যাবে না ঘরমুখো মানুষ পরিবহনে। এতে সড়কপথে চাপ পড়বে; বাড়বে ভোগান্তি। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেকশন ও জামালপুর-তারাকান্দি সেকশনের সরিষাবাড়ী-বয়ড়া স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইন বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

এ কারণে আন্তঃনগর তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা সব ট্রেন দেওয়ানগঞ্জ বাজার ও তারাকান্দি পর্যন্ত চলাচল না করে জামালপুর স্টেশন পর্যন্ত চলছে। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বাদিয়াখালী রোড-ত্রিমোহনী জংশন স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে চলাচল করা লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা-সান্তাহার-বগুড়া-বোনারপাড়া-কাউনিয়া-লালমনিরহাট রুটের বদলে ঢাকা-সান্তাহার-পার্বতীপুর-লালমনিরহাট রুট দিয়ে চলাচল করছে। একইভাবে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা-সান্তাহার-বগুড়া-বোনারপাড়া-কাউনিয়া-রংপুর রুটের বদলে ঢাকা-সান্তাহার-পার্বতীপুর-রংপুর রুট দিয়ে যাতায়াত করছে।

বন্যায় সারা দেশে ১৫০ কিলোমিটার রেলপথের ক্ষতি হয়েছে। রেললাইনের স্থানে স্থানে মাটি ধসে গেছে। এ ছাড়া স্লিপার নষ্ট হওয়া, নাটবোল্ট খোয়া যাওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় রেললাইন গভীরভাবে দেবে গেছে। এতে রেলের একাধিক স্টেশন থেকে ঢাকার সঙ্গে এখনো সরাসরি রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গাইবান্ধা জেলায়। এ রেলপথে প্রায় ৭ কিলোমিটার গভীরভাবে দেবে গেছে। গাইবান্ধার দুটি রুটে এখনো রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া জামালপুর জেলা ও কুড়িগ্রাম জেলায় রেলপথ ভেঙেছে। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেকশন ও জামালপুর-তারাকান্দি সেকশনের সরিষাবাড়ী-বয়ড়া স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যায় চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন শুক্রবার গাইবান্ধায় ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ মেরামত কার্যক্রম দেখতে গিয়ে বলেছেন, যদি আর কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দেয় তবে আশা করছি ঈদের আগেই ৮ জুলাই এই পথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জি এম খন্দকার শহীদুল ইসলাম অবশ্য গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আশ্বস্থ করে বলেছেন, আমরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি। দেড় মাসের কাজ ১৩ দিনে শেষ করে দুটি ব্রিজের মেরামত সম্পন্ন করেছি। ঈদের আগেই বাকি কাজ শেষ হবে আশা করছি। তিনি বলেন, যেখানে সড়ক বিভাগ তাদের কাজ শুরুই করতে পারেনি, সেখানে আমরা এগিয়ে রয়েছি। গাইবান্ধায় ক্ষতিগ্রস্ত রেলরুটটি মেরামত শেষে ৭ আগস্ট ট্রায়াল দেব। ৮ আগস্ট থেকে পুরোপুরি চালু করা হবে। এদিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের তথ্য মতে, বন্যায় দেশের ১৮টি জেলার ৪৫০ কিলোমিটার সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যার পানি নেমে গেলেও গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরের বন্যা উপদ্রুত জেলারগুলোর সড়কপথে ব্যাপক ভোগান্তির কারণ হবে সড়ক যোগাযোগ। এসব সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। ঈদুল আজহায় যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে এই জোড়াতালির সড়ক ঘরমুখো মানুষকে কতটা স্বস্তি দেবে তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। সওজ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ১৫ দিনের মধ্যে মেরামত করা সম্ভব হবে। তবে ঈদুল আজহার বাকি আছে মাত্র আটদিন। সড়কে পানি জমে থাকার কারণে এখনই অনেক সড়কে সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। তবে বন্যার পানি নেমে গেলে সড়কগুলোকে দ্রুত চলাচল উপযোগী করা যাবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর জানান, বন্যার পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব রাস্তা মেরামতের জন্য সব জেলার সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যেই রাস্তা মেরামতের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, সওজের বড় প্রকল্পে মনোযোগ বেশি। তাই মেরামতে তাদের মনোযোগ একটু কম। আর মেরামত কাজটাও হয় অর্থবছরের শেষ দিকে, বর্ষা মৌসুমে। বর্ষা মৌসুমে মেরামত টিকবে না- এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, মেরামত করতে হবে শুষ্ক মৌসুমে, ভালোভাবে করতে হবে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন