বিশেষ প্রতিবেদক : এক সময় সুইপার পদে চাকুরী করতেন সিটি কর্পোরেশনে। চাকুরির পাশাপাশি জড়িয়ে যান মাদক ব্যবসায়। মাদক বিক্রি করে রোজগার করেন কোটি কোটি টাকা। গাজীপুর ও আশুলিয়ায় থাকা শীর্ষ এই মাদক ব্যবসায়ী ৫/৬ বছর আগে চলে আসেন মানিকগঞ্জের গড়পাড়া ইউনিয়নের শাকরাইল গ্রামে। শ্বশুর বাড়ি এলাকায় এসে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করেন রাজপ্রাসাদের আদলে বাড়ি। বর্তমানে মাদক মামলায় হাবিবুল্লাহ আছে কারাগারে।
হাবিবুল্লাহর কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন তিন তলা বিশিষ্ট প্রসাদপ্রমো বাড়ীটি মানিকগঞ্জ জেলা শহরে আর দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবেনা। এমনই ধারনা মানিকগঞ্জের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আর পুলিশের এক কর্মকর্তার।
অনুসন্ধানে ও তার স্ত্রীর দেওয়া তথ্যে জানা গেছে সিটি করপোরেশনের সুইপার থেকে মাদক ব্যবসায়ী হয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক আর রাজপ্রাসাদ গড়ে তুলেছেন। মানিকগঞ্জের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার আশ্রয়েই নিরাপদে ছিলেন হাবিবুল্লাহ। তবে, সরকারের মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার হতে হয় পুলিশের হাতে। হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরে হাফ ডজন মাদকের মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলা শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরে গড়পাড়া ইউনিয়নের শাকরাইল গ্রামের একটি নির্জন স্থানে গড়ে তুলেছেন তার রাজপ্রাসাদ। গ্রামীন পাকা রাস্তা পেরিয়ে একটি সরু আকা বাঁকা পথ আর একটি কাঠবাগান পেরিয়ে হাবিব উল্লার বাড়ীটির অবস্থান। বাড়ীটির সামনে যেমন দৃষ্টিনন্দন ভেতরে চাকচিক্ক আরো মনোমুগ্ধ কর। বিদেশী দামী সব টাইলস, মেঝে মার্বেল পাথরে গড়া, প্রতিটি রুমেই দামী ফিটিংক্স, বিদেশী ঝাড়বাতি, কাঠের দরজায় শৈল্পিক কারুকাজ, ভেতরে ইনটোরিয়াম ডেকোরেশন ঢাকার গুনশান বারিধারার আলিশান বাড়ী ঘরের অনুকরন করা হয়েছে।
হাবিল্লাহর স্ত্রী রওশনারা বেগম জানান, তার স্বামী একসময় সিটি করপোরেশনে সুইপার পদে চাকুরি করতেন। তবে, কোন সিটি করপোরেশন সেটা তিনি জানাননি। হাবিবুল্লাহ বর্তমানে একটি মাদক মামলায় কারাগারে আছেন। তবে তার দাবী তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। সে ভাল হয়ে গেছে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। পুরোনো অভ্যাস গাজা সেবন করে মাত্র। মুলত বাড়ীর ছাদে বসে একা একা গাজা সেবন করতো তার স্বামী। এজন্য কেজি দরে গাঁজা কিনে আনতো।
তিনি আরো জানান, তারা স্বপরিবারে থাকতো গাজীপুরের টঙ্গি ও সাভারের আশুলিয়া এলাকায়। স্বামী হবিউল্লাহ অশিক্ষিত। ফাইভ পাশও করেননি। প্রায় ৬/৭ বছর আগে আশুলিয়া থেকে স্বপরিবারে চলে আসেন মায়ের বাড়ী গড়পাড়া গ্রামে। তার এই সুন্দর বাড়ী করাটাই তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার দাবী বাড়ী করার পর থেকে প্রতিবেশীরা তাদের এই ভাল মেনে নিতে পারছেন না।
জানা গেছে, হাবিবুল্লাহর বড় ছেলে রাব্বি ক্লাস নাইনে পরছে। মেঝো ছেলে জেলার অভিজাত স্কুল মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজে ইংরেজি ভার্সনে ৫ম শ্রেণীতে পড়ছে। তার পেছনে তাদের মাসে খরচ হচ্ছে ১৫/১৬ হাজার টাকার মতো। ছাট ছেলে সানির বয়স ৫ বছর। এই বাড়িতে হাবিবুল্লাহর মা, শাশুরী ও তার চার ভাতিজি থাকেন।
ওই গ্রামের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাদক ব্যবসায়ী হাবিব উল্লাহার ওপর মহলে চলাফেরা ছিল। তার এসব অপকর্মের সেলটার দিতেন সরকার দলীয় একাধিক নেতা। যে কারনে হাবিব উল্লাহ এলাকাবাসীর কাউকে তোয়াক্কা করতেন না।
এব্যাপারে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও গড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন সরকার জানান, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি জানতে পেরেছেন হাবিবুল্লাহ একজন বড় মাপের মাদক ব্যবসায়ী।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মানিকগঞ্জের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানান, জেলার মাদক ব্যবসায়ীদের শীর্ষে হাবিবুলল্লাহ অন্যতম। যার বিশাল রাজ প্রাসাদ সমবাড়ীটি মাদক ব্যবসায় থেকে অর্জিত। মাদকদ্রব্য নিয়নন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ তার বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরে একাধিক মামলা রয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের এএসপি (ডিএসবি) হামিদুর রহমান সিদ্দিকী শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ সম্পর্কে জানান, সর্বশেষ তিনি ৩ কেজি গাজাসহ আটক হয়ে জেল হাজতে রযেছেন। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। যার সবগুলোই মাদকের মামলা।
সব খবর/ মানিকগঞ্জ/ ২ জুন ২০১৮/ লিটন