বিবিসি বাংলা : বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছে তার জন্য গঠিত সরকারি মেডিকেল বোর্ড। হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, মেডিকেল বোর্ড তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ঝুঁকির কিছু দেখতে পায় নি। এই মেডিকেল বোর্ড তাদের প্রতিবেদন রোববার হাসপাতাল এবং কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছে। তবে বিএনপি সরকারের গঠিত এই বোর্ডের কর্মকাণ্ডের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছে।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়াকে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি উপেক্ষা করে সরকার দলীয়দের দিয়ে ঐ বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সরকার এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিসিন, হৃদরোগ, অর্থোপেডিক চক্ষু বিভাগের পাঁচ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডটি গঠন করেছিল সরকার। এই বোর্ডের সদস্যরা গত শনিবার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। পরদিনই রোববার তারা তাদের প্রতিবেদন হাসপাতাল এবং কারা-কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকার কারণে তার শরীরে নতুন কোনো গুরুতর রোগ বা উপসর্গ যোগ হয়নি। তার পুরনো যে আর্থ্রাইটিস রোগ রয়েছে, সে কারণেই তিনি অসুস্থ। মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে বলে ব্রিগেডিয়ার হারুন উল্লেখ করেছেন।
“উনার নতুনভাবে কোনো রোগ আমরা সনাক্ত করতে পারিনি। উনার গেঁটে বাত আগে থেকেই রয়েছে। এটির ব্যথা মাঝে বাড়ে এবং কমে। এবং চিকিৎসকরা যেটা আমাকে বললেন এবং প্রতিবেদনেও উল্লেখ করেছেন, সেটি হচ্ছে, দুই হাতের এলবো জয়েন্টে তারপর হাঁটুতে, বাম পায়ের জয়েন্টে এবং বাম কাঁধের জয়েন্টেও ব্যথা একটু বেশি আছে। এছাড়া উনার এ্যালার্জির সমস্যা আছে। এগুলোর সবই নিরাময় যোগ্য।” “উনার হাইপারটেনশন বা হার্টের কোনো সমস্যা নেই। ডায়াবেটিসও নেই,” বলেন তিনি।
তবে মেডিকেল বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কোনো চিকিৎসক না রাখায় এর সমালোচনা করে আসছিলেন বিএনপি নেতারা। এখন সেই মেডিকেল বোর্ডের কর্মকাণ্ড এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনের ব্যাপারে বিএনপি অনাস্থা প্রকাশ করেছে।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় তাদের নেত্রীর সঠিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি বলে তারা মনে করেন এবং সেই বোর্ডের প্রতিবেদন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
“ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের বাদ দিয়ে শুধু সরকারি দলের সাথে সম্পর্কযুক্তদের নিয়ে এই বোর্ড করা হয়। সেটার প্রতি আমাদের যে বিশ্বাস বা আস্থা ছিল না তা আমরা বারবার বলেছি। কিন্তু সরকার এটা বিবেচনা না করে একগুঁয়েমি করে এবং জেদ করে এই বোর্ড গঠন করেছে। আসলে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি।”
তবে বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে সরকার বলছে, রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে এই বোর্ড গঠন করা হয়। এদিকে, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের নেতৃত্বে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে তার চিকিৎসার দাবি করে আসছে বিএনপি।
সপ্তাহ-খানেক আগে একটি দুর্নীতির মামলায় ঢাকায় নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারের ভিতরে অস্থায়ী আদালতে হুইল চেয়ারে করে খালেদা জিয়াকে হাজির করা হয়েছিল। এরপর বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে দলটির সিনিয়র নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে তাদের নেত্রীর উন্নত চিকিৎসার একই দাবি করেছিলেন।
সেই প্রেক্ষাপটে সরকারের গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাদের প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালেই চিকিৎসার সুপারিশ করেছে। হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার হারুন বলেছেন, বোর্ডের সদস্যরা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা পত্র দেয়ার পাশাপাশি কিছু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
“সমস্ত কিছু দেখে উনারা কিছু চিকিৎসা দিয়ে এসেছেন।এবং কিছু পরীক্ষা করতে বলেছেন। সর্বশেষে উনারা এমন একটি হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছেন, যেখানে সব রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আছেন।এবং সে ক্ষেত্রে উনারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।” সরকারও যুক্তি দিয়ে আসছে যে, জেলকোড অনুযায়ী বেসরকারি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সুযোগ নেই।
তবে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এখানে আইনের বিষয় নয়। সরকার একগুঁয়েমি থেকে তাদের দাবি উপেক্ষা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। “উনার উন্নত চিকিৎসার জন্য যে দাবি তোলা হয়েছিল, সেটাতো সরকার করলো না।একগুঁয়েমি করে সরকার সব করছে। তাঁর যাতে ভাল চিকিৎসা না হয়, সেটাই সরকার চাইছে। এখন অবহেলা করবে, সেটাতো মেনে নেয়া যায় না।”
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত একাধিক চিকিৎসক অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন,তারা সরকারের মেডিকেল বোর্ডের বক্তব্যের সাথে একমত নন। তারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা গুরুতর। তবে তারা বলেছেন, এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া না হওয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়া নিজে সিদ্ধান্ত নেবেন।