ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলার ১৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে তাদের হাজির করা হলে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিচারক মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করেন। আগামী ১০ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে বুধবার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাণদণ্ডের সুপারিশ করে মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) জমা দেয়া হয়েছে। চার্জশিটে ১৬ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের প্রিজনভ্যানে করে আদালতে নেয়া হয়।দুপুর ১২টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে শুনানি শুরু হয়। এ সময় প্রধান আসামি বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ আসামিরা হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। পুলিশ, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে তারা বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এ সময় আসামিদের আত্মীয়স্বজন ও উৎসুক জনতারও ভিড় ছিল আদালত চত্বরে।
আদালতে চার্জশিটভুক্ত আসামি সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলমের পক্ষে ফেনীর সিনিয়র আইনজীবী গিয়াসউদ্দিন নান্নু জামিন আবেদন করেন। আদালত আবেদন আমলে নিয়ে আগামী ১০ জুন জামিনের শুনানির দিন ধার্য করেন।
বুধবার পিবিআইয়ের দাখিল করা ২২ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় জেলে থাকলেও তার নির্দেশনাই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
বাকি আসামিরা হলেন- সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম (৫০), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আফছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মণি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), মোহাম্মদ শমীম (২০) ও মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।
উল্লেখ্য, নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন নুসরাত। এ ব্যাপারে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এর পর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়। ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের করা মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।