নিজস্ব প্রতিবেদক : মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় তিন শতাধিক পাল পরিবার। সঠিক সময়ে বর্ষা না হওয়া, মাটির উপাদানের পরিবর্তন, এ্যালুমিনিয়াম ও প্লাষ্টিক দ্রব্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে না থাকতে পারায় পাল সম্প্রদায়ের মৃৎ শিল্পীরা হারাতে বসেছে তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য।
যুগযুগ ধরে নদী কেন্দ্রিক জীবিকাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে এই পাল সম্প্রদায়। নদী থেকে এটেল মাটি তোলা এবং বিভিন্ন প্রকার হাড়ি কুড়ি তৈরী করে তা আবার নদী পথেই বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে বিক্রি করতো তারা। আর এ জন্যই নদী-তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠে তাদের বসতি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন নদী হারিয়েছে তাদের নাব্যতা। আর এরই বিরুপ প্রভাব পরেছে স্থানীয় পাল সম্প্রদায়ের ওপর। এদিকে উপযুক্ত এটেল মাটির অভাব। যে মাটি পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে তৈরী পাত্র টেকসই হচ্ছে না। একারণেই হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎ শিল্পের বাজার। এছাড়া নৌকা যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় মালামাল আনা নেয়ার খরচও বেড়ে গেছে। এসব কারণে ব্যাপক ভাবে বাড়তে থাকে এ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক শিল্প যা ইতিমধ্যেই বাজার দখল করে নিয়েছে। সাটুরিয়ার পাল পাড়ার পাশেই গড়ে উঠেছে এই রকম ৬টি এ্যলুমিনিয়াম তৈজস পত্রের কারখানা।
সাটুরিয়ায় এক সময় প্রায় এক হাজার পাল পরিবার এ পেশায় নিয়োজিত ছিল। নানা প্রতিকূলতা আর সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
মনিন্দ্র্র পাল জানান, বর্তমানে মাটির হাড়ি-পাতিলের চাহিদা কমে গেছে। যারা বৃদ্ধ এবং অন্য কোন কাজ শিখে নাই শুধুমাত্র তারাই বাধ্য হয়ে এখনও এ পেশায় আছে। তিনি বলেন, “আগে নদী থেকে নৌকায় কইরা আটাইলা মাটি আনতাম। আবার নিজেরাই নৌকা নিয়ে পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করতাম। কোন খরচ লাগতো না। হাড়ি-পাতিল পুড়ানোর জন্য সহজেই জ্বালানি পাইতাম। এখন সব কিছুই কিনতে হয় চড়া দামে। একদিকে খরচ বেড়ে গেছে আবার অন্য দিকে এসবের চাহিদাও কমে গেছে।”
মায়া রানী পাল বলেন, মাটির পাতিলে রান্না করলে সহজে খাবার নষ্ট হয় না। এছাড়া স্বাদও বেশী হয়। শরীরেরও কোন ক্ষতি করে না।
নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও যারা এই পেশাকে ধরে রেখেছেন তারা অতি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এই মৃৎ শিল্প ধ্বংস হওয়ায় বিদেশ থেকে আমদানী করতে হচ্ছে এ্যলুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকজাত দ্রব্য। যা ক্ষতি করছে পরিবেশ, ধ্বংস করছে মৃৎ শিল্পকে এবং এই শিল্প নির্ভর পরিবারগুলোকে।
সব খবর / মানিকগঞ্জ / ১ এপ্রিল ২০১৮ / আসাদ