বিশেষ প্রতিবেদক : দুর্ভোগের আরেক নাম বেইলী ব্রীজ। আরিচা-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে ১২টি বেইলী ব্রীজ। এইসব বেইলী ব্রীজ মাঝে মধ্যেই ভেঙ্গে তা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে এই আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর যাত্রীসাধারণ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আঞ্চলিক মহাসড়কের মানিকগঞ্জ জেলার আরিচা-দৌলতপুর অংশের মেইনটেন্যান্সের দায়িত্বে আছে মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগ এবং টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর-টাঙ্গাইল এলাকার মেইনটেন্যান্সের দায়িত্বে আছে টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগ।
মোট ৬০ কিলোমিটার মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে ১২টি বেইলী ব্রীজ। টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার ৭ কিলোমিটার এলাকায় আছে ৮টি বেইলী ব্রীজ। টাঙ্গাইল পৌর এলাকার ৬ কিলোমিটার এলাকায় আছে ২টি এবং মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর ও ঘিওর উপজেলার ৬ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে ২টি বেইলী ব্রীজ।
এই প্রতিনিধি গত বৃস্পতিবার এই মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত বেইলী ব্রীজ এলাকা পরিদর্শন করে এবং ওই এলাকার সাধারণ মানুষ এবং গাড়ীর চালকদের সাথে কথা বলেন।তারা বলেন এইসব বেইলী ব্রীজের ওপর দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের পাথরবোঝাই ভারী ট্রাক এবং রাতের বেলায় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস এই আঞ্চলিক মহাসড়ক ব্যবহার করার ফলে মাঝে মধ্যেই বেইলী ব্রীজগুলো ভেঙ্গে তা ব্যবহার করার অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং এই মহাসড়কে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকে।
এছাড়া বেইলী ব্রীজগুলি সরু থাকায় একসাথে দুটি গাড়ী ব্রীজের ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারে না। ফলে ব্রীজের উপর দিয়ে গাড়ী অতিক্রম করার সময় মাঝে মধেই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় এবং দীর্ঘ সময় বেইলী ব্রীজের উভয় পার্শ্বে গাড়ীগুলিকে আটকে থাকতে হয়।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার তালুকনগর এলাকার ঘোড়া গাড়ীর চালক আক্কাস আলী এবং ইনছান আলী শেখ বলেন, ওই মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশে ১০০টি ঘোড়া গাড়ী চলাচল করে। কিন্তু বর্তামনে বড় বড় বাস ও ভারী ট্রাক চলাচল করায় এই মহাসড়কের বেইলী ব্রীজগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। ঘোড়ার গাড়ীর চাকা ওইসব ভাঙ্গা অংশে আটকে পড়ে। ফলে তাদের ঘোড়ার গাড়ী চলাচলে মারাত্নক সমস্যা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার চাষাভাদ্রা গ্রামের কৃষক আতোয়ার আলী বলেন, বেইলী ব্রীজ সরু থাকায় এর উপর দিয়ে একসাথে দুটি গাড়ী পাশাপাশি চলতে পারে না। ফলে বেইলী ব্রীজ এলাকায় গাড়ীগুলোকে ব্রীজ অতিক্রম করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় এবং যানজটের সৃষ্টি হয়।ওই গ্রামের রাজমিস্ত্রী মিন্টু মিয়া ও সুভাষ মোল্লা জানান, বেইলী ব্রীজে মাঝে মাঝে গাড়ী উল্টে যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকে আহত হয়।
একই উপজেলার টেংড়িপাড়া গ্রামের পিক আপ ভ্যান চালক আব্দুল হক বলেন, যানজট থাকার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর অনেক যাত্রীরা ঢাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে টাঙ্গাইল-ঢাকা মহাসড়ক ব্যবহার না করে আরিচা-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়কটি ব্যবহার করছেন। বেইলী ব্রীজ এই লোড নিতে পারছে না।
ওই এলাকার গাড়ী চালক শাকিল খান বলেন, বেইলী ব্রীজের উপর দিয়ে লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী থেকে পাথরবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে বেইলী ব্রীজ ভেঙ্গে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। একারণে মাঝে মধ্যেই ব্রীজ মেরামতের জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
তারা বলেন, বেইলীব্রীজগুলো সড়িয়ে দ্রুত পাকা ব্রীজ স্থাপন করা গেলে এই আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে নির্বিঘ্নে যাত্রীসাধারণ ও পন্যবোঝাই যানবাহন চলাচল সহজ হবে এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেকটা কমে যাবে।
মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহিবুল হক বলেন, এই মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশের ঘিওরের বেইলী ব্রীজ সড়িয়ে পাশেই পাকা ব্রীজ নির্মাণের কাজ চলছে। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, বেইলী ব্রীজগুলো সাধারণত আপদকালীন সময়ে স্থাপন করা হয়। এটি কোন স্থায়ী ব্যবস্থা নয়।
টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম নুর-ই-আলম বলেন, এই আঞ্চলিক মহাসড়কে তার অংশে ১০টি বেইলী ব্রীজ রয়েছে। সম্প্রতি নাগরপুর উপজেলার টেংরিপাড়া এলাকার বেইলীব্রীজটির কয়েকটি স্থানে ডেকিং ভেঙ্গে গেছে। একারণে ওই ব্রীজের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, এই মহাসড়ক থেকে বেইলী ব্রীজগুলো সড়িয়ে সেখানে পাকা ব্রীজ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অচিরেই পাকা ব্রীজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
সব খবর/ মানিকগঞ্জ/ ১৬ মে ২০১৮/ লিটন