স্টাফ রিপোর্টার : তরিঘরি করে গৃহপরিচারিকার লাশ দাফন করতে এসে পুলিশ হাতে আটক হয়েছে আলেয়া বেগম (২৬) নামে এক গৃহকর্তী। পুলিশ নিহত গৃহপরিচারিকার সুফিয়া (২০) এর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকালে দৌলতপুর উপজেলার বড়জোলা গ্রামে।
স্বজন ও স্থানীয় লোকজন জানান, দৌলতপুর উপজেলার বড়জোলা গ্রামে আব্দুর রহিমের মেয়ে সুফিয়া সাত মাস আগে গৃহপরিচারিকার কাজ নেন সাভার আশুলিয়া এলাকায় প্রবাসী হাফিজুর রহমানের বাসায়। হাফিজুর রহমানের স্ত্রী আলেয়া বেগম কাজকর্ম নিয়ে মাঝেমধ্যেই তাকে নির্যাতন করতেন। ঈদের ছুটিতেও বাড়ি আসতে দেননি। কাউকে কিছু না জানিয়ে রোববার সন্ধ্যার পর হঠাৎ আলেয়া বেগম সুফিয়ার লাশ নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন। সুফিয়ার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করেন তিনি। আর রাতেই কতিপয় মাতব্বরদের নিয়ে গোপন সমঝোতা করে তড়িঘড়ি করে সোমবার লাশ দাফনের প্রক্রিয়া করেন। লাশ দিয়ে দুগর্ন্ধ আর শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে হত্যা করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। এরপর তারা লাশ দাফনে বাঁধা দিয়ে পুলিশে খবর দেন ।
খলসী ইউপি সদস্য হানিফ মৃধা জানান, লাশের মাথায় দাগ ও পায়ে ব্যান্ডেজ আছে। সারা শরীর অ্যাসিডে ঝলসোর মতো মনে হচ্ছে। আর লাশে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে দুই-তিন দিন আগেই নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এই কারনে লাশ দাফনে বাঁধা দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ হাসপাতালে পাঠান ও অভিযুক্ত গৃহকর্তীকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।
সুফিয়ার বাবা আব্দুর রহিম বলেন, মেয়েকে হত্যা করছে কিনা তার তার জানা নেই ,কিন্তু তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে ‘লোকজন বলছে তার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। গৃহকর্তী রাতেই লাশ দাফনের জন্য বার বার তাগাদা দেন। সোমবার সকালে তাই লাশ দাফন না করে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। নির্যাতন করে যদি তার মেয়েকে হত্যা করা হয় তবে তিনি ওই গৃহকর্তীর দৃস্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন।
দিকে দৌলতপুর থানায় আটক গৃহকর্তী আলেয়া বেগম জানান, সুফিয়াকে হত্যা করা হয়নি। বেতনের তিন হাজার টাকা তার বাবাকে দেয়ায় সে নিজের শরীরে গরম পানি ঢেলে দিয়েছিল। পায়ের হাটু ও মাথায় নিজে নিজে দেওয়ালের সাথে আঘাত করে এ থেকেই রোববার সকালে তার মৃত্যু হয় । এক দিনের মৃত্যুতে লাশ দিয়ে দুগর্ন্ধ কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান গরমে লাশ পচে গেছে।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুনীল কুমার কর্মকার জানান, সোমবার সকাল ১০ টার দিকে বড়জোলা গ্রামে সুফিয়া নামে এক গৃহপরিচারিকার লাশ দাফনে বাঁধা খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে পুলিশ পাঠানো হয় । পরে মৃত সুফিয়া আক্তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ হয় । পরে লাশে সুরতহাল রির্পোট তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করা হয়েছে । আর লাশে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। লাশের সাথে আসা হত্যার সন্দেহে বাড়ির গৃহকর্তী আলেয়া বেগমকে আটক করা হয়েছে । এব্যাপারে ঘটনাস্থল সাভারের আশুলিয়া থানা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন ।
সব খবর/ মানিকগঞ্জ/ ১৮ জুন ২০১৮/ লিটন