১৫শ টাকার জন্য বাবার কর্মচারীর হাতে খুন হয় হৃদয়!

চার দিন নিখোঁজ থাকার পর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সাত বছরের শিশু হৃদয়ের লাশ। তার হত্যাকারী ইয়াছিন নামে স্থানীয় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তার হিসাব অনুযায়ী মাত্র দেড় হাজার টাকা সে পেত হৃদয়ের বাবা রমজানের কাছ থেকে। সেই টাকার জন্যই খুন হতে হয় হৃদয়কে!

মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আলীনগর বাজার দুই নম্বর গলি থেকে হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় হৃদয়ের বাবা জানিয়েছিলেন, চার দিন ধরে ছেলে নিখোঁজ থাকলেও কেউ মুক্তিপণ দাবি করেনি। অন্য কোনো সূত্র থেকেও ছেলের জন্য কোনো ধরনের দাবি জানানো হয়নি। ফলে তারা কোনোভাবে ধারণা করতে পারছিলেন না, কে তার সন্তানকে হত্যা করেছে।

এদিকে, হৃদয়ের লাশ উদ্ধারের পর থেকেই এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করে লালবাগ পুলিশ। পরে বিকেলে কামরাঙ্গীরচর থেকে লালবাগ থানা পুলিশ গ্রেফতার করে ইয়াছিনকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই স্বীকার করেন, হৃদয়কে হত্যা করেছেন তিনিই।

লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুভাষ চন্দ্র জানান, হৃদয়ের বাবা রমজান রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। পাশাপাশি শহীদনগর এলাকায় চায়ের দোকান ছিল তার। সেই দোকানেই বসতেন ইয়াছিন।

ওসির ভাষ্য অনুযায়ী, ইয়াছিন পুলিশের কাছে হৃদয়কে হত্যার কথা স্বীকার করে জানান, একবছর আগে তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা সুদে ঋণ নিয়েছিলেন রমজান। রাজমিস্ত্রির কাজের পাশাপাশি চায়ের দোকানের আয় দিয়ে সেই টাকা পরিশোধও করেন তিনি। কিন্তু ইয়াছিনের দাবি, রমজানের কাছে আরও দেড় হাজার টাকা পাওনা ছিলেন তিনি।

ইয়াছিন পুলিশকে জানান, রমজানের কাছ থেকে তার হিসাব অনুযায়ী দেড় হাজার টাকা ফিরে না পেয়ে কৌশলে রমজানের শিশুসন্তান হৃদয়কে শনিবার কামরাঙ্গীরচরের আলীনগরের বাসায় নিয়ে যান। রাতে হৃদয় বাড়ি ফেরার জন্য চিৎকার করলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন ইয়াছিন।

হত্যার পর হৃদয়কে বাড়িতেই রেখে দেন ইয়াছিন। কিন্তু তিন দিন পেরিয়ে গেলে লাশে পচন ধরতে শুরু করে। গন্ধ ছড়ানোর ভয়ে সোমবার মধ্যরাতে বস্তাবন্দি করে হৃদয়ের লাশ রাস্তায় ফেলে দেন ইয়াছিন। পরে মঙ্গলবার সেই লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ইয়াছিনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে ইয়াছিনের কাছ থেকে সুদে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন রমজান। তিনি বলেন, আমি কখনও সুদে টাকা নেইনি। বরং আমার দোকানে বসত ইয়াছিন। এ কারণে তাকে তিনশ টাকা করে দিতাম। সে যে আমার কাছে দেড় হাজার টাকা পায়, সেটাও তো আমি জানি না। টাকা পেয়ে থাকলে আমাকে বললেই হতো, টাকা দিয়ে দিতাম। কিন্তু মাত্র এই কয়টা টাকার জন্য একটা বাচ্চা ছেলেকে মেরে ফেলা যায়?

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রমজান বলেন, টাকা লাগলে টাকা দিতাম। কিন্তু টাকার জন্য আমার কলিজার টুকরাটাকে কিভাবে সে মেরে ফেলল!

হৃদয়ের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, স্ত্রী সুমা আক্তার আর দুই ছেলেকে নিয়ে লালবাগ শহীদ নগর এক নম্বর গলির একটি বাসায় ভাড়া থাকেন রমজান। স্থানীয় জগৎমোহন স্কুলে প্লে গ্রুপের শিক্ষার্থী ছিল হৃদয়।

গত ২৬ জানুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে খেলার জন্য বাইরে যায় হৃদয়। পরে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরদিন লালবাগ থানায় হৃদয়ের নিখোঁজের বিষয়টি জানিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা। এলাকায় মাইকিংও করা হয়। কিন্তু হৃদয়ের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।