সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

দেশে রেল, নৌ ও সড়ক পথে সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলের সক্ষমতা বাড়াতে আমদানিকৃত রেলের খুচড়া যন্ত্রাংশ দেশে তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠক (একনেক) শেষে পরিকল্পনামন্ত্র এম এ মান্নান এ তথ্য জানান। শেরেবাংলানগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় মঙ্গলবার ১৬ হাজার ৪৩৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ের মোট ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে চারটি প্রকল্প সংশোধিত। মোট ব্যয়ের মধ্যে ১৩ হাজার ৬২০ কোটি ২৭ লাখ টাকা সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে। বাকী ২ হাজার ৫২৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারের লক্ষ্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২৬৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৭০টি মিটারগেজ (এমজি) ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্পের ১ম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী জানান, রেলওয়ে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মিটারগেজ রেললাইনগুলে ব্রডগেজে উন্নীত করতে হবে। রেলওয়ের দক্ষতা বাড়াতেই ব্রডগেজে যেতে হবে। আমরা বিদেশ থেকে রেলের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ কিনছি, দেশেই এগুলো বানাতে হবে। রেল পার্টস তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো তৈরির নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টদের। ভূমি ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমি ব্যবহারে সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী হতে হবে। এজন্য জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা করতে হবে। এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়কে বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে তিন ফসলী জমি, চর ইত্যাদি যেন নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেন। তাছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনে তার দূঢ় অবস্থানের কথা আবারও পুনর্ব্যক্ত করেন।

সভায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৩২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানকল্পে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড স্থাপন প্রকল্পের ১ম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২৮৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের লিংক রোড-লাবনী মোড় সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, ১০২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আরিচা (বরঙ্গাইল)-ঘিওর-দৌলতপুর-টাঙ্গাইল সড়কের ৬ষ্ঠ কিলোমিটারে ১০৩.৪৩ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ১৫৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিজিটাল কানেকটিভিটি শক্তিশালীকরণে সুইচিং ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প, ১ হাজার কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সৈয়দপুর ১৫০ মে.ও. ১০০% সিম্পল সাইকেল (এইচএসডি ভিত্তিক) বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, ১ হাজার ১২৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রংপুর বিভাগ বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্র সম্প্রসারণ এবং পুনর্বাসন প্রকল্প, ১ হাজার ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী বিভাগ বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্র সম্প্রসারণ এবং পুনর্বাসন প্রকল্প এবং ৮ হাজার ৬৯০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৫ লক্ষ গ্রাহক সংযোগ (১৯.৫ লাখ গ্রাহক সংযোগের সংস্থানসহ) প্রকল্পের ১ম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ একনেক সংশ্লিষ্টরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার নিয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগতভাবে এটাকে আমি অ্যাপ্রিশিয়েট করি না। আবার আমি বাস্তবভিত্তিক জীবনে বিশ্বাস করি। টাকা পাচার সর্বত্র হয় সারা দেশেই। যেহেতু আমাদের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে, উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, টাকাও প্রচুর বেড়েছে আগের তুলনায়। টাকা পাচারও বৃদ্ধি পেয়েছে লজিকালি আমার মনে হয়। তবে এটা নিয়ে আমরা নানা ভাবে কাজ করছি বলে উল্লেখ করেন তিনি।