স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে রাতভর ধর্ষণ করেছে তারা

টাঙ্গাইলের নতুন বাস টার্মিনাল সংলগ্ন লেকপাড়ে স্বামীকে আটকে রেখে এক পোশাক শ্রমিককে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বখাটেরা ওই নারীকে শহরের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

পরে খবর পেয়ে পুলিশ শনিবার ভোরে পৌর এলাকার চরজানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করেছে। সকালে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।

আটকরা হলেন- কোদালিয়া এলাকার আলমগীর হোসেনের ছেলে ইউসুফ, আব্দুর রশিদের ছেলে রবিউল ইসলাম রবিন, ফজলু মিয়ার ছেলে মফিজ, দেওলা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম, বিশ্বাস বেতকা এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে ইমন ও কোদালিয়া এলাকার রকিবুল ইসলামের ছেলে করটিয়া সাদাত কলেজের ছাত্র তানজিরুল ইসলাম তাছিন।

পুলিশ জানায়, ওই নারী মির্জাপুরের গোড়াইয়ে একটি পোশাক প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তার স্বামী ওই এলাকার নির্মাণ শ্রমিক। ১০ মাস আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। শুক্রবার রাতে ওই নারী স্বামীকে নিয়ে কালিহাতী বাবার বাড়ি থেকে মির্জাপুর কর্মস্থলে ফিরছিলেন। কালিহাতী থেকে তারা সিএনজি করে রাত ১০টার দিকে টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনালে নামেন। সিএনজি থেকে নামার পর তিন বখাটে ওই নারীর স্বামীকে ডেকে দূরে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বেদম মারপিট করে। এ সময় আরও কয়েকজন ওই নারীকে জোর করে লেকের পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর তাদের কথা না শুনলে ওই নারীর স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় দুজন তার স্বামীকে আটকে রাখে, আর তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করে ইউসুফ। পরে রবিউল ইসলাম রবিন। এরপর তারা ওই নারীকে মফিজ নামে একজনের হাতে তুলে দেয়। মফিজ ও আরও দুই তিনজন মিলে ওই নারীকে কোদালিয়া এলাকায় নিয়ে রাতভর ধর্ষণ করে। অন্যদিকে ওই নারীর স্বামী রাত ১২টার দিকে ধর্ষক ইউসুফ ও রবিনের কাছ থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে এক সিএনজি চালকের সাহায্যে তিনি টাঙ্গাইল সদর থানায় এসে ওসির কাছে ঘটনা খুলে বলেন। এ সময় পুলিশ চারটি দলে বিভক্ত হয়ে রাতভর শহরের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণকারীদের ধরতে অভিযান চালায়।

টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সায়েদুর রহমান বলেন, ঘটনা জানার পর পুলিশ অভিযানে নামে। আমরা ছয়জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। মূলত ইউসুফ, রবিন ও মফিজ এই তিনজন ধর্ষণ করেছে। তারা ধর্ষণের কথা স্বীকারও করেছে। আর অন্যরা তাদের সহযোগিতা করেছে। উজ্জল ও হাসান নামে তাদের আরও দুই সহযোগি রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ জাকিয়া সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তারা ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ করেছে। রিপোর্ট আসলেই ধর্ষণের বিষয়টি জানা যাবে। তবে আলামত থেকে গণধর্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

এ দিকে দুপুরে ওই নারীর স্বামী বাদি হয়ে আটক ছয়জন এবং পলাতক উজ্জল ও হাসানসহ মোট আটজনকে আসামি করে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রায় সবাইকে পুলিশ দ্রুত গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। আসামিদের দশদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। মামলার বাদি বলেন, আমি আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।