দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নুসরাতকে হত্যার বিচার চান ভাই

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুানালের মাধ্যমে যতদ্রুত সম্ভব নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার বিচার দাবি করেছেন তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। শনিবার দুপুরে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে সমকালকে একথা বলেন তিনি। নোমান বলেন, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আমার বোনকে হত্যার বিচার দাবি জানাচ্ছি। কোনও আসামি যেন ছাড়া না পায়।

নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাৎক্ষণিক পদেক্ষপ গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। একই সঙ্গে মামলার তদন্তভার গ্রহণ করায় পিবিআইয়ের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান নোমান।

এসময় তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করে নোমান বলেন, যতদিন পুলিশ পাহারা আছে ততদিন হয়তো নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা নেই। কিন্তু পুলিশ চলে গেলে আমরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ব। এ বিয়ষটি নিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এদিকে মেয়ের শোকে শয্যাশয়ী হয়ে পড়েছন নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিন আক্তার। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নোমানসহ তার আরেক ভাইও।

গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে নুসরাতকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরা ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন নুসরাতকে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এর আগে ৭ এপ্রিল নুসরাত জাহান রাফি ‘ডাইং ডিক্লারেশন’ (মৃত্যুশয্যায় দেওয়া বক্তব্য) দেন।

নুসরাত তার বক্তব্যে বলেছেন, ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে তার শরীরে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে ওড়না পুড়ে গেলে তার হাত মুক্ত হয়। বোরকা, নেকাব ও হাতমোজা পরা যে চার নারী তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন, তাদের একজনের নাম সম্পা বলে জানান নুসরাত।

নুসরাতের স্বজনরা জানান, গত ২৭ মার্চ তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা নুসরাতকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। ওই ঘটনায় থানায় মামলা করেন তার মা। ওই মামলায় অধ্যক্ষ কারাগারে রয়েছেন। মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের লোকজন হুমকি দিয়ে আসছিল বারবার।

তারা জানান, আলিম পরীক্ষা চললেও আতঙ্কে স্বজনরা পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। মামলা তুলে না নেওয়াতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় তাকে। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান মামলা করেছেন। এতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়। অন্য আসামিদের মধ্যে শামীম, জাবেদ ও নূর উদ্দিন ওই মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র। এরই মধ্যে নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপ-মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, নুসরাত জাহান রাফির শরীরে আগুন দেওয়ার আগের দিন ৫ এপ্রিল কারাগারে থাকা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে দেখা করেন তার ঘনিষ্ঠজন নুর উদ্দিনসহ পাঁচজন। সিরাজের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী নুসরাতে পুড়িয়ে মারেন তারা।