সমকামিতা বৈধ হওয়ায় উদ্বিগ্ন ভারতীয় সামরিক বাহিনী

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সমকামিতা বৈধ ঘোষণা করায় চিন্তায় পড়ে গেছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব। এছাড়া এই রায় ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর ওপরও প্রযোজ্য কিনা তা নিয়ে সামরিক আইন বিশারদদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। ভারতীয় সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট তিনটি আইনে সমকামিতা নিষিদ্ধ করা আছে। তবে এসব আইনে অস্পষ্টভাবে বিষয়টি উল্লেখ করা আছে। বলা হয়েছে, কেউ এমন কাজে জড়িত হলে শাস্তি পেতে হবে।
ভারতের দ্য প্রিন্ট নামে একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহান্তেই সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত সেনাবাহিনীর সকল কর্নেল ও তাদের স্ত্রীদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দিল্লির মানেকশ সেন্টারে। সেখানে তিনি মন্তব্য করেন, ‘নৈতিক স্খলনে’র কোনো ক্ষমা নেই। অথচ, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে এই ‘নৈতিক স্খলনে’র সংজ্ঞা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট ৩টি আইনে কীভাবে এই রায় প্রভাব ফেলতে পারে, তা বুঝতে হলে আগে রায়টি পড়তে হবে। তবে অনেক আইনজীবী এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, সুপ্রিম কোর্টের রায় ভারতের সামরিক বাহিনীতেও সমকামিতাকে বৈধ করবে।

চন্ডীগড়ভিত্তিক আইনজীবী মেজর নভদিপ সিং সরকারি ও সামরিক বিষয়াদি সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে অভিজ্ঞ। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এই যুগান্তকারী রায় সামরিক আইনকে কিছুটা মানবিক করবে। তিনি বলেন, পরস্পরের সম্মতিতে সম্পর্ক হলে সামরিক আইনের অধীনস্থ সৈনিকরা সেনা আইনের ৬৯ ধারায় বিচারের মুখোমুখি হবেন না। এছাড়া ৪৬ ধারায় যেই ‘অস্বাভাবিক’ কর্মকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে তা-ও বাতিল হয়ে যাবে। কারণ আদালতের আদেশে বলা হয়েছে সমকামিতা অস্বাভাবিক কর্ম নয়।

তারপরও এক সেনা কর্মকর্তা বলছেন, সেনাবাহিনীতে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে। ফলে এই বিষয়টিও চিন্তা করতে হবে। আরে সেনা আইনজীবী বলছেন, এই রায়ের ফলে সামরিক বাহিনীতেও সমকামিতা বৈধ হবে এমন সম্ভাবনা কম। ওই আইনজীবী সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদের কথাও বলছেন। যেখানে বিদ্যমান আইনের কি কি সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তা বেছে নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পার্লামেন্টকে। ফলে সামরিক বাহিনীতে সমকামিতা বৈধ করতে হলে পার্লামেন্টকে আলাদা করে বিশেষ সংশোধন বা অর্ডিন্যান্স জারি করতে হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীতে সমকামিতা বেশ বিতর্কিত একটি ইস্যু। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সামরিক বাহিনীতে এখন বিষয়গুলো মেনে নেওয়া হয়। হেগ সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, শতাধিক সামরিক বাহিনীর মধ্যে ভারতের বাহিনীই সমকামী সেনাদের প্রতি সবচেয়ে কম সহানুভূতিপ্রবণ।