পেট্রোবাংলা-তিতাসের দুর্নীতি ৫০ ভাগ কমলে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে না: হাইকোর্ট

পেট্রোবাংলা ও তিতাসের দুর্নীতির ৫০ ভাগও যদি কমানো যায় তাহলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের যে মূল্য রয়েছে সেটা মেনেই আমাদের দেশে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি বা কমানো উচিত। কারণ ভারত যেখানে ছয় ডলার দিয়ে গ্যাস ক্রয় করছে সেখানে বাংলাদেশ একই পরিমাণ গ্যাস কেন দশ ডলার দিয়ে কিনবে?

বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রবিবার এই মন্তব্য করেন।

এ সময় পেট্রোবাংলা ও তিতাসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট। আদালত বলেন, দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আইনে তাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার। অথচ তারা পেট্রোবাংলা ও তিতাসের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে প্রতিষ্ঠান দু’টির কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছে। এই চিঠি চালাচালি কেন? দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে সেখানকার কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করা উচিত। এরপরই দুদককে এই রিট মামলায় পক্ষভুক্তের নির্দেশ দিয়ে গ্যাস আমদানির বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বিইআরসিকে বলেছে হাইকোর্ট। এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার, রিটকারী পক্ষে ব্যারিস্টার জ্যের্তিময় বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন দেয় কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাবের আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত বছরের ১৬ অক্টোবর গ্যাসের সঞ্চালন ও বিতরণ ফি বৃদ্ধির আদেশ দিয়েছিল। এ আদেশের বিরুদ্ধে রিট করলে হাইকোর্ট রুল জারি করে। ওই রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আবারও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করে গত ১১ মার্চ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত গণশুনানি গ্রহণ বেআইনি। আবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের আইনে গ্যাসের বিতরণ ও সঞ্চালন সংক্রান্ত প্রবিধানমালায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কতগুলো সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা বলা আছে। কিন্তু এ সব প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই অযোৗক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়াতে চাইছে পট্রোবাংলা ও বিইআরসি। এখানে দাম বৃদ্ধির নামে যেটা হচ্ছে সেটা হলো, কোন একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এই ধরনের গণ শুনানির আয়োজন। এছাড়া গৃহস্থালি পর্যায়ে দুই বার্নার চুলার জন্য ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৪০ টাকা এবং এক বার্নার চুলার দাম ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৫০ টাকা করার দাবি করা হয়েছে। প্রস্তাবনায় শিল্প ও সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এই আবেদনের ওপর গত ১৩ মার্চ শুনানি গ্রহণ করে রবিবার আদেশের জন্য দিন ধার্য রেখেছিল হাইকোর্ট। আদালত আদেশ না দিয়ে শুনানিকালে হাইকোর্ট উপরোক্ত মন্তব্য করে।