ক্ষ্যাপা হনুমানের আতঙ্কে কালীগঞ্জবাসী

কোরবান আলী, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গত এক সপ্তাহে একটি ক্ষ্যাপা হনুমান পথচারী, দোকানী, বাড়ীয়ালীসহ কমপক্ষে ১৫ জনকে কামড়িয়ে গুরুতর আহত করেছে। আহত ব্যক্তিরা স্থানীয় হাসপাতাল, ও প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত ক্ষ্যাপা হনুমানের কামড়ে আহত ৭ জনের নাম জানা গেছে।

আহতরা হলেন মেসার্স কনিকা গার্মেন্টেস এর কর্মচারী বলিদাপাড়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম (৪৫), আড়পাড়া গ্রামের (দরগা পাড়ার) বৃদ্ধা মোছাঃ রুবিয়া খাতুন (৭৫), ফয়লা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে হারুন (৩৫), বলিদাপাড়া (হঠাৎ পাড়া) মোঃ শাহিন হোসেন (৩৫), আড়পাড়া গ্রামের সমিরল বিশ্বাসের ছেলে মৃন্ময় কুমার বিশ্বাস (৪), আড়পাড়া মধূভাজা পাড়ার গৃহিনী সোনালী বেগম (৩২) এবং বাজার পাড়ার মনজের আলীর ছেলে সোহাগ হোসেন (১৩)।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আরো ৭/৮ জন চিকিৎসা গ্রহন করছেন। বর্তমানে ক্ষ্যাপা হনুমানের ভয়ে কালীগঞ্জ পৌরবাসী আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। স্কুল কলেজে যাতায়াতকারী ছাত্র-ছাত্রী, বাড়ীর শিশু-কিশোর, ব্যবসায়ী ও পথচারীরা হনুমান আতঙ্কের মধ্য দিয়ে চলাফেরা করছেন।

উল্লেখ্য, গত ২/৩ বছর যাবৎ ১৫/১৬ টি হনুমান কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় আস্তানা গড়ে তোলে। এখন এই হনুমানের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক কালে এরা সংঘবদ্ধ হয়ে বাসাবাড়ী, দোকানপাটে হঠাৎ করে হানা দিয়ে ভাত, তরকারী নষ্ট এবং কলা, পাউরুটি, বিস্কুট, কেক, পান বিভিন্ন রকম খাদ্য সামগ্রী ছিড়ে নিয়ে ঘরের ছাদে অথবা গাছের ডালে বসে মজা করে খাচ্ছে। এদের মধ্যে একটি অথবা দুটি হনুমান যত্রতত্র মানুষকে কামড় দিয়ে রক্তাক্ত জখম করছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থরা ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে হনুমানের কামড়ের ব্যয় বহুল ৫ টি ভ্যাকসিন র‌্যাবিপুর ইনজেকশন নিয়ে চিাকৎসা গ্রহন করছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, পার্শবর্তী দেশ ভারত থেকে খাদ্যের সন্ধানে কাটা তারের বেড়া টপকে বাংলাদেশের সিমান্তবর্তী অঞ্চলের বন-জঙ্গল, গাছে এবং কাঁচা-পাকা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিচ্ছে এসব হনুমান। পরবর্তিতে এরা দল বেধে থানা ও জেলা শহরসহ গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারসহ জনবসতি এলাকায় ঢুকে খাদ্যের জন্য ক্ষয়ক্ষতি চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে ভূক্তভোগী জনগণ বর্তমানে হনুমানের অত্যাচারে এক প্রকার অতিষ্ট হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে ভূক্তভোগীরা প্রশাসনসহ নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের সু-দৃষ্টি কামনা করে এর প্রতিকার দাবি করেছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ এম এ কাফী জানান, কুকুর, বিড়াল, হনুমান, শিয়াল, বাদুর, খাটাশ ইত্যাদি প্রাণীর কামড় থেকে মানুষ যে রোগে আক্রান্ত হয় তাকে জলাতঙ্ক রোগ বলা হয়। এটি একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি জল বা পানিকে ভয় পায়। এজন্য এই রোগের নাম দেওয়া হয়েছে জলাতঙ্ক। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত মানুষের কামড়েও অন্য কোন মানুষ বা পশু-পাখি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ক্ষ্যাপা বা পাগলা কুকুরের কামড়ে এই রোগ হয় বলে সাধারণ মানুষের মাঝে বহুল প্রচলিত। সাধারণত রক্ত, মাংস এবং লালার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। কামড় খাওয়ার পরে রোগটি দেখা দিতে ১০ দিন থেকে ১ বৎসর পর্যন্ত লাগতে পারে।

এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর, গলাব্যথা, খিচুঁনি, মুখ দিয়ে ফেনা এবং রক্তযুক্ত লালা নির্গত হওয়া, ভয়ঙ্কর জিনিস দেখা, খিচুঁনির মধ্যেও জ্ঞান ঠিক থাকা, পিঠ বাঁকা হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, প্রচুর লালা নিঃসরণ, সামনে যাকে পায় তাকেই কামড় দিতে চায়, কুকুরের মতো চীৎকার করা, খিচুঁনি ইত্যাদি। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত কুকুর, বানর এবং হনুমানের কামড় খাওয়ার পরে দংশনকারী প্রাণীটিকে মেরে ফেলা যাবে না। বরং তাকে ১৫ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। দেখতে হবে ওই প্রাটির মধ্যে জলাতঙ্ক রোগের কোন লক্ষণ প্রকাশ পাই কিনা। তবে কামড়ে আহত ব্যক্তিকে অবশ্যই জলাতঙ্ক রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন দিতে হবে। সাধারণত এসব প্রাণীর কামড় খাওয়ার সাথে সাথেই পাঁচটি টিকা বা ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া জরুরি। আগে নাভীর গোড়ায় ১৪টি ইনজেকশান নিতে হতো। বর্র্তমানে হাতের পেশীতে ৫টি নিতে হয়। সাধারণত ১, ৭, ১৪, ২৮, ৯০ তম দিনে ইনজেকশন গুলো নিতে হয়। এ সব এলোপ্যাথিক টিকা বা ভ্যাকসিন ইনজেকশান নেওয়ার আগে আপনাকে মেয়াদ অবশ্যই খেয়াল করতে হবে। মেয়াদ যদি না থাকে তাহলে পরেও আপনি জলাতঙ্ক রোগের আক্রান্ত হতে পারেন।

সব খবর/ ঝিনাইদহ/ ২৫ মার্চ ২০১৮/ লিটন