কিমের পবিত্র পাহাড়ে মুন

দু’জনের মুখেই স্মিত হাসি। একে অপরের হাত ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। যেন বিশ্ববাসীকে বলতে চাচ্ছেন, সব কিছু ভুলে আমরা ফের একাত্ম হয়েছি। পাশেই তাদের স্ত্রী। খুশি চোখেমুখেও।

বৃহস্পতিবার সকালে এ বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রইল উত্তর কোরিয়ার পবিত্র পাহাড় মাউন্ট পায়েকতু। বলা হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের কথা।

তিন দিনের এক ঐতিহাসিক সফরে গত মঙ্গলবার পিয়ংইয়ং যান মুন। সফরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দুই কোরিয়ার ঐক্যের প্রতীক হিসেবে মুনকে পায়েকতু পর্বতে নিয়ে যান কিম।

দুই হাজার ৭৪৪ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট একটি আগ্নেয় পর্বত পায়েকতু। চীন সীমান্তে এর অবস্থান। কোরীয় লোকগাথায় একে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোরীয় জাতির আধ্যাত্মিক উৎসস্থানও বলা হয় একে।

কিম পরিবারের বীরত্ব প্রচারেও এটি মূল ভূমিকা পালন করে আসছে। কিম জং উনের বাবা কিম জং ইলের যে জীবনী রয়েছে তাতে বলা আছে পায়েকতু পর্বতের চূড়ায় তার জন্ম। কিম প্রায়ই এ পর্বতের চূড়ায় ওঠেন।

তার ঘনিষ্ঠ কিছু সহযোগী ছাড়া আর কাউকে সেখানে যেতে দেয়া হয় না। বহুদিন আগে থেকেই এই পর্বতে ওঠার স্বপ্ন ছিল দক্ষিণের প্রেসিডেন্টের। বৃহস্পতিবার শুভক্ষণে তার সে স্বপ্ন পূরণ করেন কিম। বিশ্বের প্রথম কোনো রাষ্ট্র নেতা হিসেবে মুনকে ওই পর্বতে ওঠার সুযোগ দিলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা।

এই সফরে এই দুই নেতা কোরীয় দ্বীপের জনগণের বহুদিনের স্বপ্ন ও মনের কথাটাই বারবার করে বলেছেন। সেই কথাটা হচ্ছে, দুই কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণ। সফরের প্রথম দিনেই মুনের সঙ্গে এক বৈঠকে দুই কোরিয়ার এক হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার ছিল উত্তরের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ বছর দুই নেতা মিলে উদযাপন করেন দিনটি।

এ উপলক্ষে সন্ধ্যায় পিয়ংইয়ংয়ের মে ডে স্টেডিয়ামে উত্তর কোরিয়ার বৃহৎ ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনী ‘আরিরাং গেমস’ উপভোগ করেন তারা। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়ার জনগণের সামনে এদিনই ভাষণ দেন মুন। বলেন, ‘দুই কোরিয়ার ফের এক দেশ হওয়া উচিত যেমনটা কোরীয় যুদ্ধের আগে ছিল।’

বিবিসি জানায়, এক লাখ ৫০ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে সাত মিনিটের এ ভাষণে মুন বলেন, ‘আমি প্রস্তাব করছি, আমাদের উচিত গত ৭০ বছরের শত্র“তা সম্পূর্ণ শেষ করা এবং ফের এক হওয়ার জন্য বড় ধরনের শান্তির পদক্ষেপ নেয়া।’

এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ভাষণে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রসঙ্গও আনেন মুন। পারমাণবিক অস্ত্র ‘স্থায়ীভাবে’ অপসারণের আহ্বান জানান তিনি। সফরে এর আগে মুন উত্তরের নেতা কিম জং উনের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছেন।