তরা সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলন

জাহিদুল হক চন্দন : নিয়ম নীতি উপেক্ষা করেই মানিকগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীর তরা বালু মহালে বালু উত্তোলন করছে ইজারাদাররা। এতে করে হুমকির মুখে রয়েছে মানিকগঞ্জের সর্ব বৃহৎ তরা সেতু। এছাড়াও ঝুঁকিতে রয়েছে নদী তীরবর্তী ফসলি জমি, বসতভিটা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইজারাদাররা সরকার দলীয় প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকটাই নীরব ভূমিকায় আছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের এই স্থাপনাটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে বন্ধ হয়ে যাবে ঢাকার সাথে ২১ জেলার যোগাযোগ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বাংলা ১৪২৫ সনে মেসার্স সরকার এন্ড সন্স তরা ‘ক’ এবং শামীম এন্টারপ্রাইজের তরা ‘খ’ বালু মহাল দুটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। মেসার্স সরকার এন্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও গড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফছার উদ্দিন সরকার। এদিকে শামীম এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইসরাফিল হোসেনের ভাই জেলা পরিষদ সদস্য মো. শামীম হোসেন। এক বছরের জন্য ইজারার চুক্তিমূল্য হলো মেসার্স সরকার এন্ড সন্স ৭ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩৫০ টাকা ও শামীম এন্টার প্রাইজ ১০ লক্ষ ৩৫ হাজার ১৫০ টাকা।

বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ বিধি ৪ এর ‘খ’ তে বলা হয়েছে, সেতু কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাধঁ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হইলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটার হইলে বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সীমানার মধ্যে হইলে এবং ‘গ’ তে বলা হয়েছে, বালু বা মাটি উত্তোলন বা বিপননের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের ফলে কোন নদীর তীর ভাঙ্গনের শিকার হইতে পারে এরুপ ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

‘শাস্তির বিষয়ে বিধি ১৫ এক (১) এ বলা হয়েছে, এই আইনের ধারা ৪ এ বর্ণিত কতিপয় ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধানসহ অন্য কোন বিধান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করিলে বা এই আইন বা অন্য কোন বিধান লংঘন করিয়া অথবা বালু বা মাটি উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করিলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ (এক্সকিউটিভ বডি) বা তাহাদের সহায়তাকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগন অনূর্ধ্ব ২ (দুই) বৎসর কারাদন্ড সর্বনি¤œ ৫০ হাজার টাকা হইতে ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।’

সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্রীজের গোড়ায় থেকে বেশ কয়েকটি বড় বড় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু ড্রাম ট্রাকে করে মানিকগঞ্জসহ আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, বালু উত্তোলনকারীরা সবাই আ‘লীগের বড় বড় নেতা। এদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষতো দূরের কথা প্রশাসনই কিছু করতে পারেনা। তরা বালু মহালের ইজারা হলেও এখান থেকে নিয়ম মেনে বালু উত্তোলন করা হচ্ছেনা। এখন যে ভাবে বালু কাটা হচ্ছে তাতে করে ব্রীজটি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। এছাড়াও নদী তীরবর্তী আশে পাশের বসতভিটা ও ফসলি জমি হুমকির মুখে রয়েছে। তাই প্রশাসনের উচিত ব্রীজটির স্বার্থে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

এ বিষয়ে মেসার্স সরকার এন্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আফছার উদ্দিন সরকার বলেন, কিছুদিন আগে প্রশাসনিক ভাবে আমাদের ব্রীজ থেকে এক কিলোমিটার দূরে থেকে বালু উত্তোলন করতে বলা হয়েছে। আমরা সেইভাবেই বালু উত্তোলন করছি।

এ বিষয়ে শামীম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো: শামীম হোসেন বলেন, অনেক সময় ভুল করে হয়তো ব্রীজের কাছ থেকে বালু উত্তোলন করা হয়ে থাকে। কিন্তু সরকারি নিয়ম নীতি মেনেই বালু তোলা হচ্ছে।

এব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (রাজস্ব) পঙ্কজ ঘোষ সব খবরকে জানান, বিষয়টি তদন্ত করে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সব খবর/ মানিকগঞ্জ/ ০২ জুন ২০১৮/ লিটন