রাসিক নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতে চলছে দরকষাকষি

শামসুল ইসলাম, রাজশাহী : রাজশাহী সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনে এখন কাউন্সিলর পদে বিএনপির সমর্থন চায় শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। কাউন্সিলরে জামায়াতের প্রার্থিদের সমর্থন দিলেই মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দিতে চায় স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটি। এ নিয়ে রাজশাহীর বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এখন চলছে গোপনে দর কষাকষি। এনিয়ে তাদের সম্পর্কে দেখা দিয়েছে টানাপোড়েন। দুই দলেরই একাধিক সূত্র বিষয়টি স্বীকার করেছে।

সূত্রগুলো বলছে, এ অবস্থায় করণীয় কী, তা দ্রুত ঠিক করার জন্য রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় স্থানীয় নেতাদের পরামর্শও দিয়েছেন।

সূত্র আরো জানায়, মেয়র পদে জামায়াতের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র না তোলার পর থেকেই দলটি বিএনপির সঙ্গে কাউন্সিলরের সমর্থন নিয়ে দর কষাকষি শুরু করেছে। এ নিয়ে গত বুধবার রাতে নগরীর উপশহরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবির হোসেনের বাসায় বৈঠকে বসেন দলের নেতারা। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিটি নির্বাচনে ২০ দলের মেয়র প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই জামায়াতের সঙ্গে দ্রুতই বিষয়টি মিমাংসার তাগিদ দেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তাই যেসব ওয়ার্ডে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী রয়েছে, সেসব ওয়ার্ডে নিজেদের দলের প্রার্থিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন মহানগর বিএনপির নেতারা।কোনোভাবে প্রার্থীদের বুঝিয়ে আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো যায় কি না তার চেষ্টা করছেন তারা। তবে মনোনয়ন তোলা প্রার্থীদের পক্ষ থেকে খুব একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলেই জানিয়েছে বিএনপির একটি সূত্র।

তবে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন, কবির ভাই অসুস্থ। তাই গয়েশ্বর বাবু রাজশাহী এসেই তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। আমরাও তার সঙ্গে ছিলাম। যেহেতু তিনি নির্বাচনের জন্য এসেছেন, সেহেতু নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তিনি কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সে মোতাবেক কাজ শুরু করেছি।

তবে মহানগর বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, সিটি নির্বাচনে ঘোষণা দিয়েও জামায়াত মেয়র পদে প্রার্থী না দিলেও ১৬টি ওয়ার্ডে তারা কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪টি ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে দুটি।

জামায়াত বলছে, এই ১৬ প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে বিএনপি প্রার্থিদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করালেই মেয়র পদে তারা বুলবুলকে সমর্থন দেবে। এ নিয়ে রীতিমতো চাপ দিয়েছে জামায়াত। গোপনে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করছে বিএনপি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে বিএনপির অন্যতম শক্তিই হলো জামায়াত। প্রতিটি নির্বাচনেই জামায়াতের বড় ভূমিকা থাকে। তাদের রয়েছে নিজস্ব কিছু ভোট। তাছাড়া নির্বাচনের দিন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ভোট কেন্দ্রের আশপাশে যেভাবে অবস্থান করে, তার চেয়েও শক্তিশালী অবস্থায় থাকে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। তাই কোনোভাবেই জামায়াতকে অসন্তুষ্ট করতে চাইছে না বিএনপি। কিন্তু বিএনপির যেসব নেতাকর্মী কাউন্সিলর পদে জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মনোনয়ন তুলেছেন তাদের অনেকেই আগেও কাউন্সিলর ছিলেন। তাই তারাও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে চাইছেন না। এ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি।

যদিও বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করেননি মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। তিনি বলেন, কাউন্সিলর পদে তো দলীয় নির্বাচন হচ্ছে না। সেখানে যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন। এ নিয়ে জামায়াত বা বিএনপির মাথাব্যথা নেই। আর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ২০ দলের প্রার্থী। তার পক্ষে শুধু জামায়াত কেন, ২০টি দলের নেতাকর্মীরাই থাকবেন। এখনও সবার নির্বাচনি মাঠে নেমে কাজ করার মতো সময় আসেনি। সময় হলে সবাই কাজ করবেন। জামায়াতের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে, দেখা হচ্ছে। কোনো সমস্যা নেই।

তবে মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আবু ইউসুফ সেলিম বলেন, কেন্দ্র বলেছে রাজশাহী ও বরিশালে আমাদের কোনো মেয়র প্রার্থী থাকবে না। তবে সিলেটে হারি-জিতি আমাদের প্রার্থী শেষ পর্যন্ত থাকবে। এই কারণে আমরা রাজশাহীতে সব প্রস্তুতি নিয়েও প্রার্থীর মনোনয়নপত্র তুলিনি। পেপার-পত্রিকায় দেখছি, ঢাকায় ২০ দলের মিটিং হচ্ছে। ২০ দল বিএনপিকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াত তাদের মহানগর কমিটির সেক্রেটারি অধ্যক্ষ সিদ্দিক হোসেনকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছিল। কৌশলে ‘রাজশাহী নাগরিক পরিষদের’ ব্যানারে সিদ্দিক হোসেনের ছবি দিয়ে নগরীর মোড়ে মোড়ে পোস্টার-ফেস্টুনও সাঁটানো হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত কারাবন্দী সিদ্দিকের পক্ষে আর মনোনয়নপত্র তোলেননি স্থানীয় নেতারা। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির এমন সিদ্ধান্তে হতাশ জামায়াতের স্থানীয় নেতারা। কেননা, স্থানীয় নেতারা বরাবরই রাজশাহীতে দলের মেয়র প্রার্থী দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিকে পরামর্শ দিয়ে এসেছেন। কিন্তু সেটি কাজে না লাগায় স্থানীয় নেতারা মেয়র পদের নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাদের চিন্তা এখন কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থিদের ঘিরে। তাই আগে কাউন্সিলরের সমর্থন নিয়ে পরে মেয়রে সমর্থন দিতে চাইছে জামায়াত।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মুখ খোলেননি মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আবু ইউসুফ সেলিম। তিনি বলেন, কী হচ্ছে না হচ্ছে সব সময় হলেই জানতে পারবেন। ১০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।

সব খবর/ রাজশাহী/ ৭ জুলাই ২০১৮/ নিউজ ডেস্ক