ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বর্ণশিল্পী সমীর বনিক (৪৫) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় জুনায়েদ (৩০) নামের আটক এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবীর।
গত ১৫ আগস্ট সমীর বনিককে ছুরিকাঘাত করে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ফেলে রেখে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে স্থানীয়রা তার মরদেহ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে।
সমীর বনিক হবিগঞ্জের পইল এলাকার মৃত কৃষ্ণ বনিকের ছেলে। তিনি হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের মহলুল সুনাম এলাকায় বসবাস করে স্বর্ণশিল্পীর কাজ করতেন।
রেজাউল কবীর জানান, স্বর্ণশিল্পী হওয়ার সুবাদে সমীর বনিক মাঝে মাঝে হবিগঞ্জ থেকে স্বর্ণের অর্ডার নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসতেন। গত ১৫ আগস্ট তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে প্রায় ১৬ ভরি স্বর্ণের গহনা ক্রয় করেন। গহনা ক্রয়ের পর রাতে তিনি হবিগঞ্জের উদ্দ্যেশে রওনা হন এবং শহরের কুমারশীল মোড় থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠেন সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্ত যেতে। এই সিএনজিটি ছিল সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের। সিএনজিটিতে সমীর ছাড়া বাকি সবাই ছিল যাত্রী বেশী ছিনতাইকারী।
কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সুহিলপুর বরাবর যাওয়ার পর তারা সমীরকে মারধর করে সাথে থাকা মালামাল ছিনিয়ে নিতে। সমীরকে ছিনতাইকারীরা চেষ্টা করছিল সিএনজি থেকে ফেলে দিতে। কিন্তু সমীর সিএনজির রড ধরে রাখায় তারা ফেলতে পারছিল না। পরে তাকে এলোপাথারি ছুরিকাঘাত করে চলন্ত সিএনজি থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় সড়কের পাশে। সেইসঙ্গে নিয়ে যায় সমীরের সাথে থাকা ১৬ ভরি স্বর্ণসহ অন্যান্য মালামাল। রাত ১১টার দিকে তাকে মৃত অবস্থায় সড়কের পাশ থেকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে।
রেজাউল কবীর জানান, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সমীরের স্ত্রী মালতি বনিক বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরই পুলিশ তদন্ত কাজ শুরু করে। টার্গেট করা হয় চিহ্নিত ছিনতাইকারীদের। রহস্য উদঘাটনে বিভিন্ন টিমে ভাগ করে কাজ করে সদর মডেল থানা পুলিশ। পুলিশের তদন্তে টার্গেট করে ঘটনার ৩ দিন পর ১৯ আগস্ট নন্দনপুর বিসিক এলাকা থেকে আটক করা হয় সুহিলপুরের জুনায়েদ নামের এক ছিনতাইকারী দলের সদস্যকে। পর দিন ২০ আগস্ট আদালতে জুনায়েদকে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। গত ৪ সেপ্টেম্বর আদালত শুনানিতে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডে সে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। শনিবার আদালতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আহমেদের কাছে জুনায়েদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
রেজাউল কবীর আরো জানান, জুনায়েদ জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সিএনজিচক্রে আরো ৪ জন রয়েছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম-পরিচয় জানানো যাচ্ছে না। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সিএনজিটি জব্দ করা হয়েছে। জড়িত বাকিদের শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।