চট্টলানিউজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের একটি আদালতে তিন ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মো. সাইদুল হক (৭২) নামে এক বৃদ্ধ বাবা। উচ্চশিক্ষিত তিন ছেলের বিরুদ্ধে এই হতভাগা বাবার অভিযোগ, ছেলেরা খোঁজ-খবর না নেয়ায় স্বামী-স্ত্রী দুজনকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
অভিযোগ দায়েরের পর বিজ্ঞ বিচারক ওই তিন ছেলেকে আগামী ১১ অক্টোবর আদালতে সশরীরে হাজির হতে সমন জারি করেছেন।
বুধবার বিকালে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দীনের আদালতে অভিযোগ দায়ের পর তিনি এই নির্দেশ দেন।
অভিযোগকারী ওই বৃদ্ধ মো. সাইদুল হক (৭২) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পূর্ব মালিয়াইশ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত পরিসংখ্যান কর্মকর্তা।
মামলার বিবাদী তিন ছেলে হলেন- মো. নাজমুল হক হেলাল (৪৪), মো. সাইফুল হক (৩৬) এবং মো. মাইনুল হক (৩৪)। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে বাবা-মায়ের ভরণপোষণ আইন-২০১৩ এর ৩ ও ৫ দণ্ডবিধিতে অভিযোগ আনেন বৃদ্ধ বাবা।
মামলার অভিযোগে সাইদুল হক বলেন, জীবনের সমস্ত অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে সন্তানদের লালন-পালন ও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেন তারা (স্বামী-স্ত্রী)। সন্তানদের লালন-পালন ও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে গিয়ে তাদের দুজনের প্রতিটি মুহূর্ত অর্ধাহারে-অনাহারে কাটাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বড় সন্তান মো. নাজমুল হক হেলাল প্রতিষ্ঠিত একজন ঠিকাদার। দ্বিতীয় সন্তান মো. সাইফুল হক এম.কম পাস এবং সিঅ্যান্ডএফ ফার্ম রাজিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল চৌমুহনী আগ্রাবাদের সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট কর্মকর্তা। আর তৃতীয় সন্তান মো. মাইনুল হক রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ শেষ করে ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরিরত।
ওই তিন ছেলের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, সন্তানরা সবাই আজ আর্থিকভাবে সামর্থবান। তবে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দেয়া তো দূরের কথা তাদের খোঁজ-খবর নেয়া, চিকিৎসা বা ওষুধ খরচ দেয়ার কথাও প্রয়োজন মনে করে না।
সাইদুল হক বলেন, ২০০৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর সামান্য পেনশনের টাকা পান তিনি। যে টাকা পান ওই টাকায় পরিবারের খরচ চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। নিজের চিকিৎসা আর ওষুধ খরচ চালাতেই ইতোমধ্যে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, মেয়েদের স্বামীরা যে সাহায্য করেছে, তা দিয়েই চোখের অপারেশনের খরচ মেটানো হয়েছে। তবে ওই তিন ছেলে বৃদ্ধ অসুস্থ এই বাবাকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার প্রয়োজনটুকুও মনে করেনি।
জীবন সায়াহ্নে দাঁড়ানো এই বাবা বলেন, মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন, স্থানীয় থানা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় আপসে খোরপোষ আদায়ের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে এই মামলা করেন তিনি।
বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খোরপোষ হিসেবে তিন ছেলের কাছে প্রতিমাসে মোট ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয় মামলায়।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রামের আইন কর্মকর্তা এএম জিয়া হাবীব আহসান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বৃদ্ধ সাইদুল হকের পক্ষে বিনাখরচে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন মামলাটি পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, আদালত মামলাটি গ্রহণ করে বিবাদী তিন ছেলের বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখ আগামী ১১ অক্টোবর।