নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পানির প্রবাহের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

দেশের নদীগুলোকে মানবদেহের সঙ্গে তুলনা করে এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পানির প্রবাহ যথাযথভাবে প্রবাহমান রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘হার্টে ব্লক তৈরি হলে মানুষ মারা যায়। আমাদের নদী ও খালগুলো মানুষের প্রাণের মতো। এগুলোকে প্রবাহিত রাখতে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।’

আজ সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পানি সম্পদ মনন্ত্রণালয়ের ৮০টি উন্নয়ন প্রকল্প ও পুন:খননকৃত ৪৩০টি ছোট নদী-খাল-জলাশয়ের উদ্বোধন এবং নতুন অনুমোদিত ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে ভাষণে তিনি একথা বলেন।

শেখ হাসিনা একই অনুষ্ঠান থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘কমিউনিটি আই সেন্টার স্থাপন’ কার্যক্রমের ৪র্থ পর্যায়ে ৬৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ‘কমিউনিটি আই সেন্টার’ এর উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ নদীমাতৃক, নদীই আমাদের জীবন। এগুলো ঠিক শরীরের ধ্বমনি-শিরা-উপশিরার মত।

তিনি উদাহারণ দেন হার্টের ধ্বমনি ব্লক হলে রক্ত যেমন সঞ্চালন হতে না পেরে মানুষ মারা যায়। আমাদের দেশের নদী-নালাও আমাদের জীবনের মতই। তাদের সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। নদীর প্রবাহ যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের প্রতিটি প্রকল্প গ্রহণ ও সম্পন্ন করতে হবে।

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বা উন্নয়নের নাম করে কিন্তু সমস্ত খাল, বিল, নদী-নালা, পুকুর পর্যন্ত ভরাট করে ফেলা হয়। আমি মনে করি এটা অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে যখনই যে প্রকল্প নেওয়া হবে অবশ্যই এই পানি সম্পদকে রক্ষা করার ব্যবস্থা সেখানে সকলকে নিতে হবে। আমি তা-ই চাই।

সরকার প্রধান বলেন, ‘শুধু পাড় বাাঁধিয়েই হবে না। তাহলে তো নদী ভরাট হয়ে যাবে। বাংলাদেশ একটা ব-দ্বীপ, পলিদ্বারা সৃষ্ট। আমরা সরকারে এসেই জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করেই প্রত্যেকটা এলাকায় নদী, খাল, বিল, পুকুর, জলাধার, হাওড়,বাওড় যা কিছু আছে সেগুলোতে যেন পানির প্রবাহ সচল থাকে সেই সাথে খালগুলোর সঙ্গে নদীর সংযোগ খনন ও পুন:খননের উদ্যোগ গ্রহণ করি। যখনই আমরা সরকারে এসেছি নদী মাতৃক এই দেশে নদীর সংযোগগুলো সচল করারও উদ্যোগ নেই।’

তিনি বলেন, গত ১৪ বছরের বেশি সময় দেশ পরিচালনায় তাঁর সরকার ৯৯০কি.মি. নদী তীর সংরক্ষণ করেছে। ১,৫৪৪ কি.মি. বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ১০ হাজার ৫৭১ কি.মি. বাঁধ মেরামত করায় ৩১টি জেলাকে নদী ভাঙনের হাত থেকে সুরক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। ৫,৩০০ কি.মি নদী ড্রেজিং করা হয়েছে। ড্রেজিংকৃত মাটি যত্রতত্র না ফেলে তার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ১,০৮৬ বর্গ কি.মি ভূমি পুনঃরুদ্ধার করতে পেরেছে, যেটা আমাদের অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এই ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাঁর সরকার পানি সম্পদ উন্নয়ন খাতে ৯৭০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। দেশব্যাপী ৫,৮১১ ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, যখন কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয় রাস্তা-ঘাট, রেললাইন, স্থাপনা যাই করা হোক সেখানে যেন কোনভাবেই পানির প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত না হয়। কালভার্ট বা ব্রীজ করে দেয়ার জন্য তাঁর নির্দেশনা রয়েছে। অথবা বন্যার সময় রাস্তা ভেঙ্গে গেলে যে জায়গাটা ভেঙ্গে যাচ্ছে সেখানে আর মাটি ভরাট না করে কালভার্ট বা ব্রীজ করে দেয়ারও নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে, যেন পরবর্তিতে বানের পানি সঠিকভাবে নেমে যেতে পারে।

তিনি বলেন, কাজেই আমাদের দেশে যে কোন পরিকল্পনা করার সময় এসব বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সেভাবেই পরিকল্পনা নিতে হবে। তাছাড়া এবং জলাবদ্ধতা যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। এজন্য প্রতিটি প্রকল্পের সঙ্গে অন্তত একটা জলাধার রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ৪১ সেট ড্রেজার ক্রয় করেছে যা ব্যবহার করে ৫৩৫৫কি.মি. নতুন সেচ খাল খনন ও ১,৯৪২ সেচখাল পুন:খনন করেছে এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বন্যার আগাম সতর্ক বার্তা মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জনগণকে প্রেরণের উদ্যোগ নিয়েছে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার পানি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একবার ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পর প্রতিবছর মেনটেইনেন্স ড্রেজিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিঘাত মোকাবেলা করার জন্য আমাদের যে প্রস্তুতি তার অংশ হিসেবেই এগুলো করা হচ্ছে এবং গৃহহীণদের মধ্যে বিনামূল্যে ঘর বিতরণকালে ঝুকিপূর্ণ এলাকায় দুর্যোগ সহনীয় ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃতিকে তার আপন খেয়ালে চলতে দিতে হবে এবং এরই মধ্যে আমাদের সম্পদ রক্ষারও ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯৮ শতাংশ মানুষকে সুপেয় পানির সুবিধা প্রদানের আওতায় আনার মাধ্যমে এসডিজির একটি লক্ষ্য সরকার বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে তিনি জলপথ পরিচ্ছন্ন্ রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। চলাচলের সময় জলপথে বা নদীতে এমনকি সড়ক-মহাসড়কে বর্জ্য না ফেলার জন্য এবং বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্যও তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান। কলকারখানার দূষিত বর্জ্য জলাধার বা নদীতে না ফেলার বিষয়েও তিনি সতর্ক করেন।

তিনি বলেন, আমি আশাকরি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় গৃহীত প্রকল্পের মাধ্যমে পানির চাহিদা ভিত্তিক অতিরিক্ত ব্যবহার ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ অর্জন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে বর্তমানের চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটা সুরক্ষিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা আমরা রেখে যেতে চাই।