শামসুল ইসলাম, রাজশাহী : ৬৫ পেরিয়ে গৌরবের ৬৬ বছরে পদার্পণ করছে উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বরে পতাকা উত্তোলন ও বেলুন পায়রা উড়িয়ে কর্মর্সচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাবি উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান।
সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য, উপ-উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সর্ব ক্ষেত্রে পিছিয়েপড়া উত্তরাঞ্চলের জনগণের পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে মতিহারের সবুজ চত্বরে প্রায় ৩শ’ হেক্টর জমির ওপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। বর্তমানে এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান সরকার দেশের সব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। রাজশাহীতে এ সময় স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৫২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শহরের ভূবন মোহন পার্কে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ক্রমেই তীব্র হতে থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ জন ছাত্রনেতা। এই আন্দোলনে অংশ নেন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখশ। অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাস হয়। প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে উপাচার্য করে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫৪ সাল থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস শুরু হয় রাজশাহী কলেজে। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দফতর প্রতিষ্ঠা করা হয় পদ্মার তীরের বড়কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক রেশম কুঠির ওপর তলায়। সাতটি বিভাগে ১৫৬ জন ছাত্র এবং পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬১ সালে রাবির শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে। এই ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহার প্রাণের বিনিময়ে স্বাধিকার সংগ্রামের ইতিহাসে যুক্ত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। আর মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্বেই বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক হবিবুর রহমান, মীর আবদুল কাইয়ুম, সুখরঞ্জন সমাদ্দার। এ ছাড়াও ৩০ জন ছাত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। বর্তমানে নয়টি অনুষদের ৫০টি বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার। আর শিক্ষক রয়েছেন এক হাজার ১৩১ জন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী ২ হাজার ৫০১ জন। রাবিতে ছাত্রদের জন্য হল ১১টি এবং ছাত্রী হল রয়েছে পাঁচটি। আর গবেষকদের জন্য রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানের ডরমেটোরি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ৬৪ বছরে জড়িত ছিলেন দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ। এখানে শিক্ষকতা করেছেন জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ভাষাবিজ্ঞানী ড. এনামুল হক, বিখ্যাত নৃ-বিজ্ঞানী পিটার বার্টচী, প্রফেসর ড. এম এ বারী, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এখানে কৃষি অনুষদের পরীক্ষণ ও গবেষণা খামার আছে। এ ছাড়া ১৯৬৪ সাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সর্ব-প্রাচীন সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরটি পরিচালনা করে আসছে।
সব খবর/ রাজশাহী/ ৬ জুলাই ২০১৮/ নিউজ ডেস্ক