স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, কেউ পলাতক হলে তাকে খুঁজে বের করতে সময় লাগে, এ কারণে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তারের অগ্রগতি জানতে চাইলে রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্য আসে।
ঈদের ছুটির পর রোববার প্রথম কার্যদিবসে মন্ত্রী সচিবালয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। সেখানেই সাংবাদিকরা ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের পলাতক থাকার বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চান।
উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “নুসরাত হত্যাকণ্ডের ঘটনায় তার (মোয়াজ্জেম) বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়েছে। সে যতটুকু অপরাধ করেছে সে অনুযায়ী তার বিভাগ এবং আদালত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।
“আমরা মনে করি কেউ আইনের বাইরে নয়। সে ওসি হোক আর যে কোনো ধরনের কর্মকর্তা হোক, বা যেই হোক, জনপ্রতিনিধিও যদি হয়, আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।”
গত মার্চ মাসে নুসরাত জাহান রাফি তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করার পর তার তদন্তে তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম সোনাগাজী থানায় ডেকে নিয়ে ওই মাদ্রাসাছাত্রীর জবানবন্দি নিয়েছিলেন।
তার কয়েক দিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে তা নিয়ে সারাদেশে আলোচনার মধ্যে ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যুর পর গত ১৫ এপ্রিল ওই ভিডিও ছড়ানোর জন্য ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ওই ঘটনার তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানালে পুলিশ পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৭ মে ওই পরোয়ানা জারি হলেও মোয়াজ্জেম হোসেনকে এখনও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। নুসরাতের মৃত্যুর পর মোয়াজ্জেমকে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে পাঠান হয়। কিন্তু সেখানেও তিনি এখন নেই।
ঈদের আগে মোয়াজ্জেম হোসেনের একটি আগাম জামিনের আবেদন হাই কোর্টে জমা পড়লেও সেই শুনানি এখনও হয়নি। ফলে আদালতেও তাকে দেখা যায়নি।
এই অবস্থায় পরিদর্শক মোয়াজ্জেম ‘পলাতক’ বলে রোববার একটি দৈনিক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। সেই বিষয়েই সাংবাদিকরা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের সচিব মহোদয় তো বলছেন, যদি কেউ পলাতক হয়ে যায় একটু সময় তো লাগবে তাকে খুঁজতে।”
প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশ থেকে আনতে পাসপোর্ট ছাড়াই বিমানের পাইলটের কাতারে চলে যাওয়ার ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।
উত্তরে মন্ত্রী বলেন, “পাইলটদের ইমিগ্রেশন অন্যভাবে হয়। তাদের পাসপোর্টে সিল দেওয়া হয় না। একটা ডিক্লারেশন স্লিপ তাদের দেওয়া হয়। স্লিপটা পাইলটরা ইমিগ্রেশনে জমা দেন।
“যেখানে তারা যান সেখনেও তারা শুধু স্লিপটা জমা দেন। ওই স্লিপেই তাদের সব ধরনের তথ্য থাকে। তারপরও পাইলটদের সঙ্গে পাসপোর্ট রাখার কথা। যখন যেখানে যে দেখতে চাইবেন তখনই তাকে পাসপোর্ট দেখাতে তারা বাধ্য।”
বিমানের পাইলট ফজল মাহমুদ ‘ভুল করে’ পাসপোর্ট রেখে গিয়েছিলেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এখানে কার কার দুর্বলতা রয়েছে সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। প্রাথমিকভাবে সবার প্রশ্ন- ইমিগ্রেশন কীভাবে পার হল।
“আমরা জেনেছি ইমিগ্রেশনে পাইলট সঠিকভাবে স্লিপটি জমা দিয়েছেন। তার ফিঙ্গারপ্রিন্টও নেওয়া হয়েছে সঠিকভাবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল পাসপোর্ট সঙ্গে আছে কিনা। কিন্তু ইমিগ্রেশনে যে কর্মকর্তা কাজ করছিলেন তার উচিত ছিলো পাসপোর্ট দেখা। তিনি তা না করে গাফিলতি করেছেন।”
সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশের উপপরিদর্শক কামরুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা এবং অন্য এক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের কথাও সাংবাদিকদের বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ ক্ষেত্রে আর কার গাফিলতি আছে- তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমার মনে হয় আরও একটু কেয়ারফুল হলে এ ঘটনাটা ঘটত না। তদন্ত কমিটির মূল্যায়নের পরে আমরা পুরো বিষয়টি বুঝতে পারব। সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”