স্বজনের হাতেই খুন হন ব্যবসায়ীর স্ত্রী: পুলিশ

চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীর স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে তার স্বজন এক যুবককে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলেছে, টাকার লোভে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর কোরবানিগঞ্জে পাঁচতলা ভবনের চারতলার একটি বাসায় খুন হয় রোকসানা বেগম (৪২)। আহত হন তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে আব্দুল আজিজ (২১)। রোকসানা ছিলেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আবুল কাশেমের স্ত্রী।

এরপর অভিযান চালিয়ে কর্ণফুলী থানার মইজ্জ্যারটেক এলাকা থেকে গভীর রাতে মো. সোহেল (৩৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সম্পর্কে ব্যবসায়ী কাশেমের ভাগ্নে।

সোহেলই তার মামার বাড়িতে গিয়ে মামী রোকসানাকে হত্যা এবং মামাত ভাই আজিজকে আহত করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। পালানোর সময় তার ছুরিকাঘাতে কাশেমের প্রতিবেশী আব্দুস সোবাহানও (৬২) আহত হন।

ব্যবসায়ী কাশেম জানান, গ্রেপ্তার সোহেল তার বোন জামাইয়ের চাচাত বোনের ছেলে এবং ৩৫ নম্বর বক্সীর হাটের ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী নুরুল হকের ভাগ্নে।

সোহেলকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানায় নেওয়ার পর নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম হত্যাকাণ্ডের কারণ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সোহেল টাকার লোভে কোরবানিগঞ্জে আবুল কাশেমের বাসায় যান। যাওয়ার সময় তিনি একটি ছুরি ও খেলনা পিস্তল নিয়ে গিয়েছিলেন।

“তার ধারণা ছিল কাশেম ব্যবসায়ী হওয়ায় তার বাসায় অনেক টাকা থাকবে। রোকসানাকে একা পেলে সে চাকু ও ছুরির ভয় দেখিয়ে বাসা থেকে টাকা কিংবা মূল্যবান কিছু নিয়ে আসবে।”

পুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বলেন, মঙ্গলবার সকালে সোহেল মোটর সাইকেলে কাশেমের বাসায় গিয়ে রোকসানার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। রোকসানা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সোহেল ছুরি ও খেলনা পিস্তলটি দেখিয়ে তাকে ভয় দেখান। তারপরও রোকসানা টাকা না দেওয়ায় সোহেল তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।

“এসময় ঘরের আলমারি ভেঙ্গে বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার, তেলের ডিও, রোকসানার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে নেয়।”

পুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বলেন, ওই সময় বাসার গৃহকর্মী ঢুকে পড়লে তাকে ছুরির ভয় দেখিয়ে একস্থানে বসিয়ে রেখেছিলেন সোহেল, তখন রোকসানার ছেলে আজিজকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

“সোহেল হাতে ছুরি নিয়ে পালানোর সময় ভবনের নিচে এক প্রতিবেশী তাকে বাধা দেয়। তখন সোহেল তাকেও ছুরিকাঘাত করে। হত্যাকাণ্ডের আলামত নষ্ট করতে সোহেল বাসাটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়।”

পুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বেগম বলেন, ভবনটিতে সিসি ক্যামেরা ছিল। তার ফুটেজ দেখে সোহেলকে শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম খাইরুল আমীনের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সোহেল।

হত্যাকাণ্ডের পরও আশেপাশে অবস্থান
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান জানান, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সোহেল তার মোটর সাইকেলটি রেখে ঘটনাস্থলের কাছে খাতুনগঞ্জ আমিন মার্কেট এলাকার নিউ পার্ক ভবনে অবস্থান করেছিলেন।

“সেখান থেকে এক যুবককে বাকলিয়া ময়দার মিল এলাকায় তার বাসায় পাঠিয়ে কাপড় চোপড় আনায় সোহেল। কাপড় আনার পর তার পরনে থাকা গেঞ্জি, প্যান্ট, স্যান্ডেল ভবনের তৃতীয় তলার বাথরুমে রেখে জামা-কাপড় পাল্টে ফেলে। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাযের পর সে ভবন থেকে নেমে তার সাথে থাকা ব্যাগটি নিচে ফেলে দিয়ে ১০ টাকা দিয়ে একটি বাজারের ব্যাগ কেনেন। সে ব্যাগে মালামালগুলো নিয়ে মইজ্জ্যারটেক এলাকায় চলে যায়।”

মইজ্জ্যারটেকের বাসাটি সোহেল আগেই ভাড়া নিয়েছিল জানিয়ে কামরুজ্জামান বলেন, “সে বাসায় গিয়ে সোহেল ফোন করে তার স্ত্রীকে ওই বাসায় যেতে বলেছিল। সে বাসা থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

পুলিশ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, সোহেলকে গ্রেপ্তারের পর তারা বাসা থেকে একটি ল্যাপটপ, সিম, স্বর্ণের ও ইমিটেশনের অলঙ্কার, সিটি গ্রুপের ১২টি ডিও উদ্ধার করা হয়। যেগুলো আবুল কাশের বাসা থেকে চুরি হয়েছিল।

“পরে তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে রাস্তা থেকে ছুরি, নিউ পার্ক বিল্ডিং থেকে কাপড়, খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়,” বলেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের আগে ইয়াবা সেবন
ব্যবসায় লোকসান দিয়ে হতাশ সোহেল মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। সোহেল পুলিশকে বলেছেন, বছর দুয়েক ধরে তিনি ইয়াবায় আসক্ত। মঙ্গলবার সকালে কোরবানিগঞ্জে রোকসানার বাসায় যাওয়ার আগে তিনটি ইয়াবা সেবনের কথা পুলিশকে বলেছেন এই যুবক।

বাকলিয়া মিয়াখান নগর এলাকায় ‘মদিনা ইলেকট্রিক এন্ড হার্ডওয়ার’ নামে একটি রিকশার যন্ত্রাংশের দোকান ছিল সোহেলের। লোকসানের পর মাস তিনেক আগে ৭০ হাজার টাকায় দোকানটি বিক্রি করে দেন তিনি।

সোহেল পুলিশকে বলেন, দোকান বিক্রির টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পর অর্থাভাবে পড়েন তিনি। টাকার অভাবে তার ২৮ হাজার টাকা ঘর ভাড়াও বকেয়া হয়ে গিয়েছিল।