‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশ কোনো সহযোগিতা করছে না’

আগের মতোই রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের কাঁধেই দোষ চাপিয়ে দিলো মিয়ানমার। সরাসরি অভিযোগ করা হয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশ কোনোই সাহায্য করছে না। এমন কি সম্পাদিত চুক্তিতেও সম্মান দেখাচ্ছে না বাংলাদেশ। শুক্রবার জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ শীর্ষক ২৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির অফিস বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কাইওয়া টিন্ট সয়ে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন নিক্কি এশিয়ান রিভিউ।

এতে তিনি অভিযোগ করেন, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চল থেকে যেসব মানুষ পালিয়ে গিয়ে শরণার্থী হয়েছে তাদেরকে ফেরত পাঠানো এবং আবাসিক কার্ড দেয়ার বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করছে না বাংলাদেশ। এখানেই শেষ নয়। তিনি আরো অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বলেছেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবর্তন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তার প্রতি কোনোই সম্মান দেখাচ্ছে না বাংলাদেশ।

ওই চুক্তির অধীনে রোহিঙ্গা ও অন্য যেসব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রত্যাবর্তন শুরু হওয়া উচিত ছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। কিন্তু সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে কোনো রোহিঙ্গা এখন পর্যন্ত ফেরত আসে নি।

নিক্কি’র আয়োজনে বসেছিল এবার ২৫তম ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব দা ফিউচার অব এশিয়া শীর্ষক সম্মেলন। এতে মিয়ানমারের ওই মন্ত্রী আরো বলেন, প্রায় ২০০ মানুষ তাদের নিজেদের ইচ্ছায় বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসেছে। তারা এসেছে অত্যন্ত কঠিন সফরের মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিষয়ক চুক্তি বার বার বিলম্বিত হয়েছে, যদিও এ নিয়ে জাতিসংঘের দুটি সংস্থার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে গত বছর। উদ্দেশ্য, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিরাপদ ও স্বেচ্ছাভিত্তিক নিশ্চিত করা। তবে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো বলছে, নাগরিকত্বের মতো আইনগত সুরক্ষা ছাড়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে গেলে তারা সেখানে অব্যাহত নির্যাতনের মুখে পড়বে, যেখানে তাদের অবাধ চলাফেরা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার অধিকার দেয়া হয় না।

মন্ত্রী কাইওয়া টিন্ট সয়ে বলেছেন, যেসব মানুষ ‘সার্টিফিকেট অব রেসিডেন্স’ নিয়ে ফিরে আসবে তাদের সবাইকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত মিয়ানমার সরকার। এ ছাড়া যারা বৈধ তারা নাগরিকতের জন্য আবেদন করতে পারবে। মন্ত্রী আরো বলেন, রোহিঙ্গা বাদেও কক্সবাজার সীমান্তে আটকা পড়ে আছেন ৪৪৪ জন হিন্দু। মিয়ানমার তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার আনুষ্ঠানিক আবেদন করা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তাদেরকে ছেড়ে দেয় নি। তিনি আরো বলেন, যে ২০ জনের মতো হিন্দু ফিরে এসেছেন, তারা এসেছেন স্বেচ্ছায়। নিজেদের আয়োজনে। তাদের কেউই সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে আসেন নি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংস নির্যাতন শুরুর পর কমপক্ষে ৭ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘ একে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তবে মিয়ানমার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, তারা সন্ত্রাসী বিরোধী অভিযান চালিয়েছে রাখাইনে। এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে কড়া নিন্দা জানিয়েছে আসিয়ান। কড়া সমালোচিত হয়েছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। তার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফেরত নেয়ার দাবি উঠেছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে তাকে দেয়া অভিজাত সব পুরস্কার ও খেতাবের বেশির ভাগই।
এ অবস্থায় মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে চীন। দেশটির সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ককে মন্ত্রী কাইওয়া টিন্ট সয়ে ‘অত্যন্ত ভাল’ বলে আখ্যাযিত করেছেন। বলেছেন, তার সরকার সব প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চায়। তিনি বলেন, চীন ও মিয়ানমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। দু’দেশের মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। তিনি বলেন, মিয়ানমারে প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে চীনের। তবে এতে মিয়ানমার যে ঋণের ফাঁদে পড়বে বলে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে, এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

অবকাঠামো খাতে আর্থিক বিনিয়োগ নিয়ে চীনের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে মন্ত্রী কাইওয়া টিন্ট সয়ে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি করেছে আগের সরকার। সেটা নিয়ে শুধু নতুন করে সমঝোতা করেছেন অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সরকার, যাতে কোনো ঋণের ফাঁদে না পড়ে মিয়ানমার। এ সময় মন্ত্রী জাপান সহ সকল বাণিজ্যিক অংশীদাদের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন। বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকে আরো বন্ধুত্বপূর্ণ করার জন্য তার সরকার বিনিয়োগ বিষয়ক নীতিকে পুনর্গঠন করেছে। তার ভাষায়, আমরা এরই মধ্যে জাপানকে বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানিয়েছি। আমি এটা ঘোষণা করতে পেরে খুশি লাগছে যে, সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে টয়োটা মিয়ানমারে বিনিয়োগ করতে আসছে।