ভিন্ন পেশায় বাঁশ বেত শিল্পের কারিগররা

স্টাফ রিপোর্টার : নিজ পেশায় টিকতে না পেরে ভিন্ন পেশায় চলে গেছে মানিকগঞ্জের বাঁশ বেত শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় সহ¯্রাধিক কারিগর। পর্যাপ্ত ঋণ, পুঁজি স্বল্পতা, বাঁশ ও বেতের উৎপাদন হ্রাস, আর্থিক অসচ্ছলতা, উপকরনের অভাব ও খোলা বাজারে কাঁচামালের দাম অত্যাধিক বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই আজ বিলুপ্তির পথে ঐহিত্যবাহী বাঁশ বেত শিল্প।
জানা গেছে, জেলার সাতটি উপজেলাতেই কমবেশি বাঁশ বেতের বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্তমানে সদর উপজেলার বেতিলা, মিতরা, নওখন্ডা, সিংগাইরের বংশারচর, জয়মন্টপ, সাটুরিয়ার হরগজ, ঘিওরের বড়টিয়া, সিংজুরি, পয়লা , বালিয়াখোড়া ও হরিরামপুরের আন্ধারমানিক, লেছড়াগঞ্জ এলাকার স্বল্প সংখ্যক পরিবার তাদের পৈত্রিক পেশার হাল ধরে আছে। যদিও তাদের অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয়। বাকিরা টিকে থাকতে না পেরে দিন মজুরি, রিকশা, ভ্যান ও অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসায় গমন করেছে।
বেতিলা গ্রামের গুলজার আলী জানান, কয়েক বছর হলো পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন দিন মজুরি করি। বাঁশ বেত শিল্পে টাকা বিনিয়োগ করে খুব একটা লাভ হতো না। এখন গতর খেটে কাজ করি, দিন বাদে ২/৩শ টাকা রোজগার হয়। পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে চলছি। তবে যেদিন কাজ না থাকে সেদিন অনেক কষ্ট হয়। তবে আগের চেয়ে অনেক ভাল আছি।
নওখন্ডা গ্রামের হাবিব মিয়া জানান, গত বছর ব্যবসার কিছু টাকা ছিল তা দিয়ে একটি রিকশা কিনেছি। এখন রিকশা চালিয়েই সংসার চালাই।
স্মৃতিচারণ করে বংশার চর গ্রামের প্রবীন কারিগর ভবতোষ মন্ডল জানান, আগে সুন্দর সুন্দর জিনিস তৈরী করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করতাম। স্ত্রী, ছেলে মেয়েরাও আমার সাথে কাজ করতো। দুই মেয়ে বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ছেলে বাঁশ ও বেতের তৈরি কুলা, চাটাই , হাঁস মুরগীর খাঁচা, ঘাড়া, বেতের চেয়ার, ধামা, চালুনি, ঢুলি, খলাই, বুরং, হাত পাখা এসব জিনিস বানাতো। কষ্টানুযায়ী লাভ না হওয়ায় তারা এখন বাড়ির সামনে মুদি দোকানের ব্যবসা করছে।
বাঁশ বেত শিল্পের বিলুপ্তির কারণ হিসেবে তিনি জানান, বর্তমানে বাঁশ ও বেতের চাষ না হওয়াতেই এই শিল্পটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
তবে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতাই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জড়িতরা।