বাবা-ছেলের দখলে চাঁদপুর-২ আসন

মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা নিয়ে চাঁদপুর-২ আসন। এখানে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার একক আধিপত্য রয়েছে। যার জন্য এ আসনে বিএনপি প্রার্থী তো দূরের কথা আওয়ামী লীগের অন্য কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশীও প্রচার-প্রচারণা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনে এখন শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের মায়া ও তার ছেলে দীপু চৌধুরীর প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে। জানা গেছে কোনো কারণে মায়া মনোনয়ন না পেলে তার বড় ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু মনোনয়ন পেতে পারেন। আর সেই সম্ভাবনায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তারা।

তবে এ আসনের মতলব দক্ষিণে বিএনপির কিছুটা প্রচারণা লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু বিএনপির কমন প্রার্থী নুরুল হুদার মৃত্যুর কারণে এবার এ আসনে শক্ত কোনো প্রার্থী নেই।

মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ এই দু’উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে চাঁদপুর-২ নির্বাচনী আসন। এ আসনের বর্তমান এমপি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম)। তার সময়ে প্রচুর সংখ্যক রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, সোলার লাইট স্থাপন, আশ্রয়ন প্রকল্প ও বীর নিবাস নির্মাণসহ ব্যপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। মতলববাসীর বহুদিনের প্রতীক্ষিত মতলব সেতু নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে মায়ার। এছাড়াও মেঘনার চরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, আধুনিক বীজাগার, ফরাজীকান্দিতে আইসিটি পার্ক নির্মাণের অগ্রগতিকেও জনসাধারণ খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।

মায়া ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন সাবেক এমপি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরুল আমিন রুহুল ও ঢাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক এম ইসফাক আহমদ।

অ্যাডভোকেট নূরুল আমিন রুহুল ও এম ইসফাক আহমদ অভিযোগ করে বলেন, চাঁদপুর-২ আসনে বর্তমান এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার আধিপত্যের কারণে কোনো প্রচারণা চালানো যাচ্ছে না। যারাই প্রচারণা করতে যায়, তাদের ও তাদের বাড়িতে হামলা করা হচ্ছে। এমনকি প্রচারণায় ব্যবহৃত পোস্টার-ব্যানারও ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রশাসনকে অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনে চাঁদপুর-২ ও ৩ আসনকে পুনঃসংস্কার করে মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলাকে চাঁদপুর-২ আসনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর আগে ১৯৭৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মতলব উত্তর নিয়ে চাঁদপুর-২ আসন ছিল। এ আসনে বিএনপির প্রয়াত নুরুল হুদা ৩ বার এমপি হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এমপি হয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

এদিকে চাঁদপুর-২ আসনে নুরুল হুদা ৩ বার এমপি হন। তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন। তার মৃত্যুতে এ আসনে বিএনপি অনেকটাই অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে। তবে সরকারি দলের নানা বাধা পেরিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যারা ইতিমধ্যেই জানান দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. জালাল উদ্দিন, সাবেক এমপি প্রয়াত নূরুল হুদার বড় ছেলে তানভীর হুদা, বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ শুক্কুর পাটোওয়ারী।

অপরদিকে চাঁদপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এমরান হোসেন মিয়া ও মিজানুর রহমান খান। ২০০১ সালে মিজানুর রহমান খান জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা মহাজোটে থাকায় জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী ছিল না। সূত্র: জাগোনিউজ।