বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার তুলনায় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়: অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু

ঢাকা অফিসঃ ১৯৭১ এ দেশ স্বাধীনের পর মাথাপিছু আয় ছিল ১২৯ ডলার। এখন ২ হাজার ২২৭ ডলার। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অতীতের সকল রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৫.৫৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।বাংলাদেশে স্বাধীনতা উষালগ্নে দারিদ্র সীমার নীচে বাস করতো দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ, এখন তা কমে দাড়িয়েছে শতকরা ২০.৫ ভাগ। ১৯৭২-৭৩ সালে বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে তা দাড়িয়েছে ৬ লাখ ০৩ হাজার কোটি টাকায়। দেশে এখন বার্ষিক মোট বিদুৎ উৎপাদন ২৪ হাজার মেগাওয়াট ও খাদ্য শস্যের উৎপাদন ৪৫১ লাখ টনে পৌঁছেছে।

স্বাধীনতা পরবর্তী রপ্তানি আয় ছিল ৩৪৮.৩৩ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা দাড়িয়েছে ৩ হাজার ২০৭ কোটি ডলার। এছাড়াও বাংলাদেশে শিক্ষা হার,গড় আয়ু,আমদানি, রপ্তানি, রিজার্ভ, ডলারের মান,জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এবং মাথাপিছু আয় এখন পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। অনেক সামাজিক সুচকে ভারতের চেয়েও বাংলাদেশ এগিয়ে। কোন কোন ক্ষেত্রে পরাক্রমশালী চীনের চেয়েও এগিয়ে। কিন্তু শিক্ষায় বরাদ্দের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখিত দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে আছে।

বাংলাদেশ করোনা সহ বিভিন্ন প্রতিকুলতা অত্যন্ত সফল ভাবে মোকাবেলা করে অর্থনীতিতে ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। যা সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সক্ষমতার দিক বিবেচনা করে শিক্ষায় বরাদ্দের পরিমান অবশ্যই বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে একটি টেকসই শিক্ষা বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য।

এবারের বাজেটেও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। কিন্তু মোট বাজেট বৃদ্ধির আনুপাতিক হারে আরো বেশি অর্থ বরাদ্দ প্রয়েজন ছিল। এবারের মোট বাজেটের আকার ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। শিক্ষা ও প্রযুক্তি মিলে এবার বরাদ্দ করা হয়েছে মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ৭ ভাগ। শুধু শিক্ষা খাতে ৭১ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি,মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি,কারিগরি ও মাদরাসায় ৯ হাজার ১৫৩ কোটি। শিক্ষা খাতে গত অর্থ বছরের চেয়ে এবার ৫ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা বেশি। যা গতবারের তুলনায় ৮.৬৭% বেশি। তবে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামুল্যে বইয়ের পাশাপাশি তাদের জন্য কিড এ্যালাউন্স, ড্রেস,জুতা,ব্যাগ কেনার জন্য বরাদ্দের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য মাসে ১৫০ টাকা উপবৃত্তির বরাদ্দ রাখা অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা,ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধার কোন ঘোষণা না থাকায় শিক্ষক কর্মচারীরা হতাশ হয়েছেন। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে এমপিওর জন্য বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে,তবে তা পর্যাপ্ত নয়। বাজেটে অতিরিক্ত যে টাকা বরাদ্দ রয়েছে তা অগ্রাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে করোনার বিষয়টি মাথায় রেখে সে ভাবে অর্থ বরাদ্দ করা হলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনেক দাবি পুরণ করা সম্ভব। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়কে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

যেহেতু বাজেট কেবল সংসদে পেশ করা হয়েছে। এখনো সুযোগ আছে করোনা পরবর্তী শিক্ষাকে একটি শক্ত ভীতের উপর দাড় করার জন্য শিক্ষা খাতকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ অর্থনৈতিক ক্ষতি পোষানো সম্ভব। আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা ও ব্যবসায়িরা তা অনেকটা পুষিয়ে দিয়েছেন। আমাদের সম্মানিত কৃষক ভাইয়েরা রেকর্ড পরিমান ফসল উৎপাদন করে জাতিকে খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছেন। কিন্তু করোনায় আর্থিক সংকট ও দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ঝড়ে যাওয়া, বাল্যবিবাহ,শিশুশ্রম এবং শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ইন্টারনেট ও মোবাইল আসক্তি,কিশোর গ্যাং এ জড়িয়ে বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হওয়ার কুফল জাতিকে দীর্ঘদিন ভোগ করতে হবে। এ বিষয়গুলো অবশ্যই নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। শিক্ষা এই ক্ষতি সহজে পুরণ হবার নয়। এজন্য সুদুর প্রসারি কর্মসূচি সহ স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য এ বাজেটেই পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।