বনানীতে লাশের মিছিল, নিখোঁজ আরও অনেকেই

যত সময় গড়াচ্ছে বাড়ছে লাশের সারি। রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ-এর বহুতল বাণিজ্যিক ভবনে ভয়াবহ আগুনে এ পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭০ জন। সাড়ে সাত ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর প্রতিটি তলায় এখন তল্লাশি চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী। আগুনের ঘটনা তদন্তে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চোখের সামনে নিশ্চিত মৃত্যু তবু শেষ মুহূর্তে বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন এফআর টাওয়ারের ভেতর আটকে পড়া মানুষেরা। প্রতিদিনের মতোই স্বাভাবিক একটা দিন হতে পারতো বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দিনটা অথচ ঘড়ির কাটায় যখন বেলা বারোটার একটু বেশি চুড়িহাট্টার পর মৃত্যু ফাঁদ তখন বনানীর কামাল আতাতুর্ক রোডে এফআর টাওয়ারে।

রাসায়নিক কিংবা দাহ্য পদার্থের গোডাউন নয় কিংবা নয় পুরান ঢাকার অলিগলি। অভিজাত ঢাকার সুউচ্চ ভবনে দম বন্ধ হয়ে মরতে হয়েছে তাদের। আগুন চোখে কম পড়লেও ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে আচ্ছন্ন গোটা এলাকা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ভবনের ভেতর আটকে পড়া অনেকে বাচার জন্য লাফ দিয়ে নিচে পড়েন।

কথিত বিল্ডিং কোড কিংবা ভবন মালিক মৃত্যুফাঁদে ছেড়ে দিলেওতো বাঁচতে হবে। তাই তড়িঘড়ি করে নামতে থাকে ভবনে অবস্থান করা লোকজন। আগুন থেকে প্রাণ বাঁচাতে ১৭ তলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়তে দেখা যায় অনেককে।

কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট। বেলা ২ টা নাগাদ তা বেড়ে দাড়ায় ১৩ টি ইউনিটে। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত হয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ও নৌবাহিনীর মার্সেটিজ ট্রাক।

অগ্নিকাণ্ডের ২ ঘণ্টা পরও ধোয়ায় কুণ্ডলী ও আগুন দেখা যায় ভবনটি ঘিরে। তখনও ভবনে আটকা পড়ে বহু মানুষ। এ সময় বিভিন্ন তলার কাচ ভেঙে ভবন থেকে বের হবার চেষ্টা করেন অনেকে। বেলা ৩টায় কয়েকজনকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা বলেন, নানান ধরনের সমস্যা নিয়ে আমরা উদ্ধারকাজ চালিয়েছি। ডিএমপির কমিশনার বলেন, আহতদের সুচিকিৎসা প্রদানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ প্রদান করেছেন। হতাহতদের জরুরি ভিত্তিতে নিয়ে যাওয়া হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, অধিকাংশের অবস্থাই ভালো।

অগ্নিকাণ্ডের ৩ ঘণ্টার পর পৌনে ৪টার দিকে আবারও বেড়ে যায় আগুনের তীব্রতা। বিকেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় সেনাবাহিনী। ততক্ষণে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের সংখ্যা দাড়ায় ২১টি তে। এর মাঝে আগুনের তীব্রতা কিছুটা কমলে বেশকিছু লোককে ক্রেন দিয়ে ভবন থেকে নামিয়ে আনে দমকল কর্মীরা।