প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে মেয়ে ও স্বামীকে খুন করে হাছিনা

‘অনৈতিক সম্পর্ক’ দেখে ফেলায় সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়েকে খুন করে মা হাছিনা ও তার প্রেমিক মাঈন উদ্দিন। পরে হাছিনা প্রেমিক মাঈন উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে শ্বাসরোধের পর ছুরিকাঘাতে স্বামীকেও খুন করে। চট্টগ্রামে বাসায় বাবা-মেয়ে খুনের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তারের পর রোববার নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

গত শনিবার নগরের বন্দর থানার নিমতলা এলাকার শাহ আলমের ভবনের ভাড়া বাসা থেকে বাবা ও সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়ে ফাতেমা নুরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরপর হাছিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে নিহত আবু তাহেরের ভাই নুর আলম বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়া মাঈন উদ্দিনকে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার নবগ্রাম বাজার থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, লাশ উদ্ধারের পর হাছিনা পুলিশকে জানায়, তাহের তার মেয়েকে খুন করে নিজে আত্মহত্যা করেছে। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর হাছিনা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্বামী তাহের বাসা থেকে বের হওয়ার পর মাঈন উদ্দিনের সঙ্গে হাছিনার ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ শিশু ফাতেমা নুর দেখে ফেলে ও বাবাকে বলে দেওয়ার কথা বলে। এ সময় মাঈন উদ্দিন ফাতেমার হাত-পা চেপে ধরে আর হাছিনা ছুরি দিয়ে হত্যা করে লাশ খাটের ওপর রেখে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। কিছুক্ষণ পর তাহের বাসায় ঢুকলে মাঈন উদ্দিন ও হাছিনা তাকে জাপটে ধরে গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ এবং পেটে ও মাথায় ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি গলা কেটে ফেলে।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) কামরুল হাসান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাছিনা জানিয়েছে, শিশু ফাতেমা দেখে ফেলার পর মাঈন উদ্দিন বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কথা বললেও হাছিনাই মেয়েকে মেরে ফেলার কথা বলে এবং নিজে খুন করে। ঘটনার পর মাঈন উদ্দিনকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে হাছিনা। এরপর চিৎকার-চেঁচামেচি করে লোক জড়ো করে। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তাহের ও হাছিনা দু’জনেরই আগে বিয়ে হয়েছিল। তাহেরের আগের স্ত্রী মারা গেছে। আর হাছিনার সঙ্গে তার স্বামীর বনিবনা না হওয়ায় ছাড়াছাড়ি হয়েছিল। বিচ্ছেদের পর নিমতলা এলাকায় বড় বোনের বাসায় থাকার সময় পাঁচ বছর আগে তাহেরের সঙ্গে হাছিনার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। আর মাঈন উদ্দিনের স্ত্রী তার নোয়াখালীর বাড়িতে থাকেন। মাঈন উদ্দিন একই ভবনের নিচতলায় আরেকটি কক্ষে ভাড়া থাকত। তিন মাস আগে মাঈন উদ্দিনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ায় হাছিনা। গত বৃহস্পতিবার হাছিনাকে একটি লাল শাড়ি উপহার দেয় মাঈন উদ্দিন। এই শাড়ি পরা নিয়ে হাছিনার সঙ্গে আবু তাহেরের কলহ শুরু হয়। মাঈন উদ্দিন এসএপিএল কন্টেইনার ডিপোতে শ্রমিকদের মাঝি (শ্রমিক সরবরাহকারী) হিসেবে কাজ করে। আর তাহের ওই কন্টেইনার ডিপোসহ বিভিন্ন স্থানে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- নগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) হামিদুল আলম, নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মির্জা সায়েম মাহমুদ ও বন্দর থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী।