প্রতারণার নতুন ফাঁদ

কোরবান আলী, ঝিনাইদহ : চাল ও গম মিলে ফেলে বিশেষ ব্যবস্থায় ময়লা আবর্জনা মুক্ত করার পদ্ধতিটি বহু পুরানো। কিন্তু ছাগল হলার করার কথাটি এর আগে অনেকেরই জানা ছিল না। মেশিনের সাহায্যে বিশেষ পদ্ধতিতে ছাগলের পেটে গুড় বা লবণ মিশ্রিত পানি ঢুকিয়ে ফুলিয়ে হাটে তোলা হচ্ছে। আশ্চয্যজনক মনে হলেও ঝিনাইদহের হাটবাজারে এই হলার করা ছাগলগুলো বিক্রি করা হচ্ছে।

গত দুই বছর ধরে ঝিনাইদহ ও পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার কতিপয় অসাধু ছাগল ব্যবসায়ী এই ব্যবস্থায় ছাগল বিক্রি করে চলেছে। সম্প্রতি বিষয়টি মাংশ বিক্রেতাদের কাছে ধরা পড়েছে। প্রতারণার এই নতুন ফাঁদ দেখে ঝিনাইদহ প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা হতবাক হয়েছেন। এই ফাঁদে পড়ে মাংশ বিক্রেতারা রীতিমত প্রতারিত হচ্ছে।

মাংশ ব্যবসায়ী ছামছুল ইসলাম বলেন, তিনি গত হাটে দুইটি হৃষ্টপুষ্ট খাসি ছাগল কিনে বাড়িতে আনেন। ছাগল দুইটিতে ১২ কেজি করে ২৪ কেজি মাংশ আন্দাজ করে কেনা হয়। বাড়ি আনার পর সারা রাত ধরেই প্রস্রাব পায়খানা করে জীর্ণশীর্ণ হয়ে যায় ছাগল দুটি। জবাই করার পর প্রতিটি ছাগলের ৮ কেজি করে মাংশ হয়। এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হন। ঝিনাইদহের মাংশ বিক্রেতা সমিতির সভাপতি জয়নালও নতুন কৌশলে প্রতরণার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।

দুলাল নামে এক ছাগল ব্যবসায়ী জানান, তিনি দীর্ঘদিন এই ব্যবসার সাথে জড়িত। সম্প্রতি হাট বাজারে হলার করা ছাগল কিনে তিনিও প্রতারিত হয়েছেন। সাধুহাটী এলাকার গৃহবধু লিলিমা বেগম জানান, তার মেজ দেবর দুইটি খাসি ছাগল কিনে আনেন কোরবানীর জন্য। পরদিন কথিত হৃষ্টপুষ্ট সেই ছাগল রোগা আর জীর্ণ মনে হলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, হলার করা ছাগল নিয়ে ছাগল পালকরা খুবই বিপদে আছে। কারণ বাজার থেকে কিনে আনার পর কারো বোঝার ক্ষমতা নেই এটা হলার করা না গৃহস্থ বাড়ির ছাগল। মাংশ বিক্রেতারা জানান, ঝিনাইদহের সবচে বড় হাট হচ্ছে কালীগঞ্জের বারোবাজার। এই হাট ছাড়াও সদর উপজেলার গান্না, বৈডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গার দশমাইল, বাজার গোপালপুর, ভাটই ও গোয়ালপাড়া হাটে অহরহ হলার করা ছাগল বিক্রি হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে ছাগল মোটাতাজা করার বিষয়টি কারো ধারণাই আসে না এমন কথা জানালেন ঝিনাইদহ প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ হাফিজুর রহমান জানান, তিনি বিষয়টি জানতে পেরে ঝিনাইদহের হাটে বাজারে নজরদারী বৃদ্ধি করেছেন। তিনি বলেন, শুধু ছাগলই নয় গরুও হলার করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মুরগীকে পাথর খাইয়ে ওজন বাড়ানোর কুমতলব থেকে এই ধারণাটি ছাগলের ব্যাপারীরা রপ্ত করেছে বলে তিনি ধারণা করছেন।

সব খবর/ঝিনাইদহ/১৪ মার্চ ২০১৮/সোহেল