পশ্চিমবঙ্গে অভিনেতা ফেরদৌসের নির্বাচনী প্রচার নিয়ে চরম বিতর্ক

পশ্চিমবঙ্গের একটি লোকসভা কেন্দ্রে বাংলাদেশি অভিনেতা ফেরদৌসের নির্বাচনী প্রচারে রোডশো করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিদেশী অভিনেতার এই ভাবে সরাসরি রাজ্যের শাসক দলের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়া আদৌ নীতিসম্মত কিনা সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে রোডশোর ছবি সহ খবর প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। রোববার উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জে একটি রোডশোয়ের আয়োজন করেছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই রোডশোয়ের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস। সঙ্গে অবশ্য কলকাতার অভিনেতা অঙ্কুশ ও অভিনেত্রী পায়েলও ছিলেন। ছিলেন প্রার্থী স্বয়ং। দেখা গেছে, ফেরদৌস ট্রাকের উপরে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন।
হাত জোড় করে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের হয়ে ভোট দেবার আবেদনও জানিয়েছেন।

এদিন রায়গঞ্জের পাশাপাশি হেমতাবাদেও আরেকটি রোডশো-এ টালিগঞ্জের সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন ফেরদৌস। সোমবার করণদিহি এবং ইসলামপুরেও দুইটি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যেতে পারে তাকে। নিঃসন্দেহে ভোট প্রচারে বিদেশী তারকা এনে তৃণমূল কংগ্রেস নজির তৈরি করেছে। অতীতে এমন নজির রয়েছে বলে কেউ মনে করতে পারেন নি। ফেরদৌস বাংলাদেশের মতো কলকাতাতেও জনপ্রিয়। অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণ সেনগুপ্তের সঙ্গে জুটি করে তিনি টালিগঞ্জে অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রায়গঞ্জ কেন্দ্রের ৫০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের দিকে তাকিয়েই ফেরদৌসকে প্রচারে আনা হয়েছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ভারতের একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিভাবে বিদেশী নাগরিককে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রোড শো করাচ্ছে? আমি এরকম আগে শুনিনি। আগামীকাল হয়তো আমাদের মমতা ব্যানার্জি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তৃণমূলের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার জন্য ডাকতে পারেন। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই। তিনি আরও বলেছেন, একজন বাংলাদেশী অভিনেতাকে ব্যবহার করে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল উত্তর দিনাজপুর জেলার ৫০ শতাংশ মুসলিম ভোট নিজেদের দিকে টানতে চাইছে।

তৃণমূল আসলে আমাদের দেখে ভয় পেয়ে গেছে, তাই বিদেশ থেকে অভিনেতা নিয়ে আসছে। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অবশ্য এসব প্রশ্নকে আমলেই দিচ্ছেন না। তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের মতে, আমাদের হৃদয়ে তো একটাই বাংলাদেশ। তাই ভাষা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনের পাশাপাশি রাজনীতিতেও যদি এমন মেলবন্ধন থাকে তাতে ক্ষতি কি? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, টালিগঞ্জে এখন তৃণমূল কংগ্রেস রাজত্ব বিরাজ করছে। এই দলের হয়ে প্রচার করছেন অধিকাংশ অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা। তাই ফেরদৌসের কাছে প্রস্তাব আসায় তিনি তা উপেক্ষা করতে পারেন নি। কারণ, টালিগঞ্জে টিকে থাকতে হলে শাসক দলের এই অনুরোধটুকুকে মান্যতা দিতেই হতো।