পরিবহন ধর্মঘট: চালকের মুখে পোড়া মবিল, সচিবালয়ের গাড়িও ছাড় পায়নি

যাত্রী নিয়ে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় আসতেই পরিবহন শ্রমিকরা হামলে পড়লেন তাতে। যাত্রীদের টেনেহিঁচড়ে চালককে নামিয়ে চড়থাপ্পড় মারতে শুরু করলেন তাঁরা।

অটোরিকশাটি উল্টে দিয়ে চাবি নিয়ে গেলেন এক শ্রমিক। চালক হাউমাউ করে কাঁদছেন। নেতাগোছের আরেকজন শ্রমিক এসে অটোরিকশার চালকের পিঠে হাত দিয়ে ধমক দিয়ে বললেন, ‘যা, সোজা গ্যারেজে চলে যা। দুই দিন রাস্তায় নামবি না।’

‘এই ধর্মঘট কার জন্য? তোগো জন্যই তো, দুই দিন কষ্ট কর, আজীবন আরামে গাড়ি চালাবি,’ বলেন নেতাগোছের ওই শ্রমিক।

আজ রোববার ভোর ৬টা থেকে আট দফা দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ীতে কোনো গণপরিবহন চলতে দেখা যায়নি। যাত্রাবাড়ীতে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে ডেমরা থেকে আসা দুটি বাসের যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাস দুটির চাবি নিয়ে গেছেন শ্রমিকরা।

এদিকে, রাজধানীর অফিসগামী হাজার হাজার মানুষ হেঁটে চলছেন। বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রাইডশেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও-উবারের মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যস্থলে যাচ্ছেন অনেকে।

মোটরসাইকেলের চালক, ব্যক্তিগত গাড়ির চালক কিংবা আরোহীদের মুখেও পোড়া মবিল মেখে দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছেন ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তায় নামা শ্রমিকরা। এরই মধ্যে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সমালোচনাও হচ্ছে।

মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চাকরি করেন আবদুল গফুর। তিনি জানালেন, কাঁচপুর থেকে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে যাত্রাবাড়ী এলাম। সপ্তাহের প্রথম দিন, তাই অফিসে যেতেই হবে। আরো তিন কিলোমিটার হেঁটে মতিঝিল যেতে হবে।’ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আবদুল গফুরের মতো হাজার মানুষ হেঁটে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেছেন।

অন্যদিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রোববার ভোর হতে এ পর্যন্ত সেখান থেকে কোনো বাসই বের হয়নি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বাস এই টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়, ধর্মঘটের কারণে আজ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দূরপাল্লার কোনো বাস সায়েদাবাদ ছেড়ে যায়নি।

ধর্মঘটকারী শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—সড়ক দুর্ঘটনার সব অপরাধ জামিনযোগ্য করা, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল করা, সড়ক দুর্ঘটনায় গঠিত যেকোনো তদন্ত কমিটিতে ফেডারেশনের প্রতিনিধি রাখা, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি নির্ধারণ এবং সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা।

এর আগে গত ১২ অক্টোবর শ্রমিক ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেয়, সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারসহ আট দফা দাবি ২৭ অক্টোবরের মধ্যে পূরণ না হলে ২৮ অক্টোবর থেকে দুদিনের কর্মবিরতিতে যাবেন শ্রমিকরা।