বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, অগণতান্ত্রিক সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করে ভারতের কাছ থেকে আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের ভবিষ্যত এবং সভ্যতা নিশ্চিত হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, বর্তমানে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে যৌথ নদী কমিশনের মিটিং পর্যন্ত হচ্ছে না। ভারতের উচিত দাদাগিরি থেকে বেরিয়ে এসে ভ্রাতৃসুলভ আচারণের মাধ্যমে পানি ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো।
সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টার কর্তৃক “Water Sharing Issue between Bangladesh and India : the way forward” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (২৮ জুন ২০২২) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব এর তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই গোলটেবিল আলোচনা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টার এর চেয়ারম্যান সুমন হক এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার।
মোস্তফা কামাল মজুমদার তাঁর প্রবন্ধে বলেন, ভারত নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর প্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট করেছে। ভারত কর্তৃক নদীতে বাঁধের ফলে নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে লবনাক্ততার হার বেড়ে গেছে। সুন্দরবন চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন প্লাবন ভূমি নাই, মাছ নাই। রাজনৈতিকভাবে সীমান্তে এসে নদী ভাগ হবে এটা অবৈজ্ঞানিক একটি বিষয়। ফারাক্কা চুক্তি অনুসারে শুরু থেকেই আমরা পানি পাচ্ছি না। উজান থেকে ভারত পানি সরিয়ে নেয়। সনাতন পানি বন্টন ব্যবস্থা বাদ দিয়ে নদী ব্যবস্থাপনার উপর জোর দিতে হবে। তিস্তা চুক্তি না করে ভারত বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। ভারত যেখানে তিস্তা চুক্তি করছে না,সেখানে তিস্তা সংক্রান্ত চীনের সহায়তায় যে প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে তার বিরোধিতাকারীদের থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ শরনার্থী শুধু বাংলাদেশকে নয় ভারতকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই সীমান্তে নদীর ভাগাভাগি করার চিন্তা পরিহার করতে হবে।
জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. এস আই খান বলেন, ভারতের একচেটিয়া মনোভাবের কারণে বাংলাদেশ বন্যায় ভাসছে, লবনাক্ততা বাড়ছে এবং মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক যে ক্ষতিসমূহ হয়েছে তা নিরূপণ করে ভারতের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে হবে৷ অন্যথায় প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে৷ বাংলাদেশকে পানিশূন্য কারাই ভারতের উদ্দেশ্য। তিনি অবশ্য ভারতের এহেন আচরণের জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের নতজানু নীতিকেও দায়ী করেন। তিনি বলেন, বেসিনভিত্তিক নদীর পানির ব্যবস্থাপনা করতে হবে৷ ৫৪ টি নদীর জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থাপনা করতে হবে। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহকে ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য ঢাকায় মহাসমাবেশ করার আহবান জানান এবং এ আন্দোলন দেশের গ্রামে, গঞ্জে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানান। তিনি সকলকে “রক্ত দিব, পানি দিব না”এই স্লোগানে উজ্জীবিত হওয়ার আহবানও জানান।
পানি বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার এম. ইনামুল হক বলেন, ভারতের রাজনৈতিক দুষ্টামি, আমাদের অজ্ঞতা এসবই বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। ভারতের কারণে আমরা পানি বঞ্চিত হয়ে যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি তা নির্ণয়ে একটি কমিটি গঠন করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। ফারাক্কা, তিস্তা এবং অন্যান্য নদীর পানি থেকে ভারত আমাদের যেভাবে বঞ্চিত করছে তার ক্ষতিপূরণ ভারতের কাছে চাইতে হবে এবং এই ঐতিহাসিক অধিকার আদায়ের জন্য দেশের জনগণকে তথা তরুণ সমাজকে দায়িত্বশীল এবং যোগ্য সরকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, নদী আইন অনুসারে ভারত বাংলাদেশের প্রতি ন্যায় বিচার করছে না। পানি সংক্রান্ত অধিকার নিয়ে বাংলাদেশে যারা কথা বলে তারা অতীতের ন্যায় বর্তমানেও নানা নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছে। ভারতের আধিপত্যের কারণে আমাদের অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়েই চলেছে। ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-জীবিকা বদলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে নিজের, জনগণের প্রয়োজনে পানির অধিকার বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে। ভারতের সাথে পানি ইস্যুতে নিজেদের অধিকারকে সমুন্নত রেখে দেনদরবার করতে হবে যেমনটি ১৯৭৭ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান করেছিলেন। ভাসানী পানি ইস্যুতে জনগণকে নিয়ে যেভাবে জেগে উঠেছিলেন ফলশ্রুতিতে ভারত অন্ততঃ ফারাক্কা নিয়ে একটি চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল যাতে নূন্যতম আমরা আমাদের পানির অধিকারটুকুন পাই। পানির ন্যায্যহিস্যার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দেশপ্রেমিক হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন ঢাবির এই শিক্ষক।