ধর্ষণ রোধে পুরুষদের সোচ্চার হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

নারী ও শিশু ধর্ষণ রোধে সরকারের কঠোর অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ ধরনের জঘন্য নোংরা কাজ যারা করে, তারা মানুষ নয়। ধর্ষণ রোধে যা যা করার দরকার কিংবা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার হলে সরকার তা-ই করবে। ধর্ষণ প্রতিরোধে নারীরা এগিয়ে এসেছেন। এ বিষয়ে পুরুষদেরও সোচ্চার হতে হবে।

সোমবার বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর সদ্যসমাপ্ত চীন সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রতি নারী-শিশু ধর্ষণের ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়া-সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য হচ্ছে ধর্ষণ সব সময় সব দেশেই আছে। তবে এখন মেয়েরা সাহস করে কথা বলে। একটা সময় সামাজিক লজ্জার কারণে বলতে পারত না। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারীতে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হওয়া শিশু সায়মার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অপরাধীকে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করেছে এবং সে ধর্ষণের কথা স্বীকারও করেছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।

ধর্ষণ রোধে পুরুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ধর্ষণ তো তারাই করে। পুরুষ সমাজেরও একটা আওয়াজ তোলা উচিত, কিছু করা উচিত। খালি নারীরাই চিৎকার করে যাবে নাকি? নির্যাতিত হয়ে তারা চিৎকার করবে, কিন্তু নির্যাতনকারীর স্বজাতি পুরুষদেরও এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া উচিত।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের আগে ঠিক করতে হবে, তাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি-না। দেশের উন্নতি করতে চাইলে জ্বালানি দরকার। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপি কতটুকু বেড়েছে? আর এখন জিডিপি ৮ দশমিক ১ শতাংশ বাড়ছে। এটাকে দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়া হবে। উন্নতির কারণ হচ্ছে, সরকার জ্বালানির ক্ষেত্রে মনোযোগ দিয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও গ্যাস আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানির জন্য খরচও বেশি পড়ছে, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু শিল্পায়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সার উৎপাদন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে হলে সরকারকে এলএনজি আমদানি করতেই হবে। প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে খরচ পড়ে ৬১ টাকা ১২ পয়সা। কিন্তু সেটা বিক্রি করা হচ্ছে ৯ টাকা ৮০ পয়সায়। এ জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করতে গিয়ে যারা ভারতে দাম কমানোর প্রসঙ্গ তোলেন, তাদের উদ্দেশে দু’দেশের দামের তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আন্দোলনে একটা মজার বিষয় আছে, বাম আর ডান মিলে গেছে এক সুরে, এই তো? ভালো। এখন লোডশেডিং নেই, সবাই বেশ আরাম-আয়েশে আছে বলেই ভুলে গেছে অতীতের কথা। ১০ বছর আগে কী অবস্থা ছিল? আর আন্দোলন যেহেতু করেছে, তাহলে একটা কাজ করি, যে দামে কিনব, সেই দামে বেচব। ৯ টাকার বদলে ৬১ টাকা দরে বেচব!

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বাম জোটের হরতালে উষ্ফ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, গ্যাসের সব ট্যাপ মাফ করে দেওয়া হয়েছে। মানুষের কাছে যাতে সহজলভ্য হয়, সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তারপরও তারা হরতাল ডাকেন, আন্দোলন করেন! খুব ভালো, বহুদিন পর হরতাল পেলাম তো, পরিবেশের জন্য ভালো, ধন্যবাদ।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি নাকচ করে দিয়ে গত তিনটি বিসিএস পরীক্ষায় পাসের তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিসিএসের তথ্য বলছে, বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষায় পাসের হার কম। তারা এ নিয়ে আন্দোলন করছে, করুন। কিন্তু কারও প্ররোচনায় আন্দোলন করে থাকলে কিংবা আন্দোলনের পেছনে কোনো ইন্ধন থাকলে সেটাও দেখা হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে সরকার ও আওয়ামী লীগ ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে বলে জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের সাফল্য-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বরং বিশ্বকাপে ভালো পারফরম্যান্স করেছে। অতীতে বিশ্বকাপজয়ী এবং অনেক দিন ধরে খেলছে এমন নামিদামি দলকেও সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করে ভালো খেলেছে। বাংলাদেশ দলের সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান নাম করেছে। তবে সব সময় ভাগ্য সহায় থাকবে, তা তো নয়। আমি আমার ছেলেদের উৎসাহিত করি। তারা ভালো খেলেছে। আমার ছেলেদের তো আমি খারাপ বলতে পারব না। ৩৮৪ রান চেজ করে ৩৩৩ রান করাটাও কিন্তু কম কথা নয়।

শেখ হাসিনা বলেন, চীন সফরকালে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দেশটি এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এটা ঠিক, চীন মিয়ানমারের সঙ্গে সব সময় আছে। তবে এই যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আছে এবং এটা যে বাংলাদেশের জন্য বিরাট সমস্যা, এ কথা তো তারা নিজেরা উপলব্ধি করতে পারছে। সে জন্যই তারা মনে করছেন, এ বিষয়টার দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত।